স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডা. আবুল হোসেন কলেজের বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে আমাদের রাজবাড়ীর স্টাফ রিপোর্টার কলেজ সভাপতির একান্ত স্বাক্ষাতকার গ্রহণ করেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন –
রাজবাড়ী পৌরসভার প্রানকেন্দ্রে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত ডা. আবুল হোসেন কলেজটি এ জেলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বেসরকারি কলেজ। অতীতে নানাবিধ সমস্যা থাকলেও বর্তমানে কলেজটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। প্রশাসনিকভাবে কলেজটিতে কোন অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষ না থাকায় যথাযথ ভাবে চলতে পারছে না এবং প্রশাসনিক ভাবে জটিলতায় ভুগছে। এ সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি পাবার লক্ষ্যে বারবার অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষ নিয়োগের চেষ্টা করেও পেছনের অশুভ শক্তি বাধা সৃষ্টি করে আসছে, যার সুরাহা হওয়া প্রয়োজন। এ বিদ্যাপিঠটি সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার স্বার্থে প্রশাসনিক এ পদ দুটিতে নিয়োগ এই মুহুর্তে অত্যাবশ্যক। এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মাউশির দৃষ্টি আকর্ষন করছি ।
সরকার নীতিগতভাবে সারা বাংলাদেশের বেসরকারি ডিগ্রি কলেজের সভাপতি হিসাবে মাননীয় সংসদ সদস্যদের অন্তর্ভুক্তির বিধান মাননীয় হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। রাজবাড়ী-১ এর মাননীয় সংসদ সদস্য আলহাজ¦ কাজী কেরামত আলী পূর্বে এ কলেজের সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে সরকারি বিধিমতে জাতীয় বিশ^বিদ্যলয় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বারকে এ পদে নিয়োগ দিয়েছেন। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে তার জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করে জানতে পারেন যে, বীরমুক্তিযোদ্ধা ফকীর আব্দুল জব্বার একজন বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তি। সেই সাথে তিনি বিভিন্ন কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার অভিজ্ঞতায় অভিজ্ঞ বিধায় একজন যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল রাজবাড়ী ডা. আবুল হোসেন কলেজের সভাপতি হিসেবে ।
তিনি আরও বলেন, ডা. আবুল হোসেন একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব, কলেজ প্রতিষ্ঠায় তার অবদান রাজবাড়ীর ইতিহাসে ভাষ্মর হয়ে থাকবে। অত্র কলেজে দুই ধরনের শিক্ষক আছে-এমপিওভুক্ত ও নন এমপিও ভুক্ত। কলেজ ফান্ডের অর্থাভাবে সকল শিক্ষকদের সময়মত বেতন হচ্ছে না, তাছাড়া কলেজের নানাবিধ সমস্যা, শিক্ষকদের মধ্যে সমন¦য়হীনতা বিগত বছরগুলিতে পদ পদবী নিয়ে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। বিগত ২০ বৎসর রাজবাড়ী-১ এর মাননীয় সংসদ সদস্য এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের বলিষ্ঠ চেষ্টা ও স্বচ্ছতার অভাবে কলেজটি যথাযথভাবে পরিচালিত হয়নি। আমার মনে হয়েছে অতীতের কিছু কিছু শিক্ষকের নিয়োগের ক্ষেত্রগুলিও বিতর্কিত ছিল । কলেজের এহেন সমস্যাগুলি নিয়ে কলেজের বিরুদ্ধে কতিপয় সাংবাদিক কর্তৃক এক ধরনের হলুদ সাংবাদিকতা চলছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে তারা কলেজের সাফল্য ও ইতিবাচক দিকগুলি তুলে ধরেন না। ঢাকা রাজবাড়ী মহাসড়ক লাগোয়া সবুজে ঘেরা এ কলেজটি যোগাযোগের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকায় জেলার ও জেলার বাইরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে । আমি সভাপতি পদ গ্রহন করার পর কলেজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে নির্বাহী কমিটি, শিক্ষক ও কর্মচারীদের সাথে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করেছি কলেজের উন্নয়নের জন্য । শুধু তাই নয় কলেজ গভর্নিং বডির মিটিং উপলক্ষে যে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হতো, সেটাকে আমি শূন্য কোঠায় এনেছি। এই কলেজটিতে কোন শহিদ মিনার ছিল না, আমি মাননীয় সংসদ সদস্য রাজবাড়ী-১ এর সাথে আলাপ করে জেলা পরিষদের মাধ্যমে একটি দৃষ্টিনন্দন শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠা করেছি । পরপর চার বৎসর আমি জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসবাবপত্র ও শিক্ষা সহায়ক সামগ্রীর ব্যবস্থা করেছি। এই জেলার ছয়টি কলেজসহ ৩৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে আমি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। হাজার হাজার শিশুদের শিক্ষা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। নারী শিক্ষার অগ্রসরেও ভূমিকা রেখে যাচ্ছি । যুবদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মাদক থেকে দূরে রাখতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য প্রতিষ্ঠান গড়েছি। Tvet দৌলতদিয়া ও রাজবাড়ীতে কেকেএস কম্পিউটার প্রশিক্ষন কেন্দ্র তার মধ্যে অন্যতম। জননেত্রী শেখ হাসিনার জিরোটলারেন্স নীতি সামনে রেখে আমার প্রিয় ডাঃ আবুল হোসেন কলেজের আর্থিক স্বচ্ছতা আনার জন্য নির্বাহী পরিষদ ও সম্মানিত শিক্ষক ও সুধি সমাজের সাথে আলোচনা করে কলেজের আয়ব্যয় হিসাব ব্যংকের মাধ্যমে লেনদেন নিশ্চিত করেছি। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, শিক্ষকবৃন্দ ও নির্বাহী পরিষদ আমার এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে সর্বদা সমর্থন করে আসছেন। আমি বিশ্বাস করি যদি ঘুষ ও দুর্নীতি বন্ধ হতো তাহলে বাংলাদেশে বহু শিশু হাসপাতাল সহ অনেক শিশুবান্ধব স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পদ্মা সেতুর মত আরো সেতু বানানো সম্ভব হতো।
আমি বিভিন্ন কলেজের সভাপতি থাকায় আমার কাজকর্মে ও কলেজ পরিচালনায় শিক্ষকদের মধ্যে কোন অনীহা বা সমস্যার সৃষ্টি হয়নি। সকল কলেজ শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে পরিচালনা করে আসছি। যদিও সকল কলেজে আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই তথাপিও সুশৃংলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। যে কোন মুহূর্তে সভাপতি পদ থেকে সরে যেতে হবে, আমি জানি। যতদিন এ কলেজকে আগলে রেখেছি ততদিন কোন অসংগতি ও দুর্নীতি কলেজকে স্পর্শ করতে দেব না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতিতে বিশ্বাসী একজন জনপ্রতিনিধি হলেও কর্মক্ষেত্রে আমি রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সকলকে সাথে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। এজন্য আমি সকল রাজনৈতিক দল, জনপ্রতিনিধি, সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী ও মেহনতি মানুষের নেতৃত্ব সর্বোপরি সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা চাই। কলেজটির সার্বিক ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি দূর করার মাধ্যমে জেলা ও জেলার বাহিরের শিক্ষীদের উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, শিক্ষানুরাগী ও সর্বস্তরের সুধিজনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আবশ্যক।