৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয়েছে নাটক ধুলোমাটির চিৎকার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মিজ সুলতানা আক্তার। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইমরুল হাসান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মোছা. শামিমা পারভীন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ী জেলার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের ব্যক্তিবর্গ।
দেশব্যাপী প্রযোজনা কেন্দ্রিক নাট্যকর্মশালার অংশ হিসেবে নাটকটি পরিবেশিত হয়। নাটকটি রচনা করেছেন লুব্ধক অনার্য নির্দেশনায় ছিলেন অনিক কুমার নির্দেশনা সহযোগি ছিলেন নিতাই কর্মকার। প্রযোজনা অধিকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার আল মামুন বিন সালেহ। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র প্রশিক্ষণ বিভাগের আয়োজনে এবং রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় নাটকটি মঞ্চস্থ হয়।
জুলাই অভ্যুত্থান’২৪-এ অসংখ্য তরুণের আত্মদান পরবর্তী সময়ে তরুণ প্রজন্মের উপর এক ভয়াবহ মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি করেছে। এই চাপ নিরসন করতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমের উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টির অভিপ্রায়ে দেশের সকল জেলায় প্রযোজনা কেন্দ্রিক নাট্যকর্মশালা ও শহীদ মুনীর চৌধুরীকে স্মরণ করে প্রথম বারের মতো মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্যোৎসব-২০২৫ আয়োজন করেছে।
এ আয়োজন নিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, জুলাই বিপ্লব এবং স্বৈরাচার পতনের পর দেশ এক অস্থির পরিস্থিতির মুখোমুখি। এই অস্থিরতা মানুষের মনস্তত্ত্বেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। নতুন এই পরিস্থিতি আমাদের বাক স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিয়েছে, গুম-হত্যা, জেল-জুলুম, মিথ্যা মামলার ভীতি থেকে মুক্তি দিয়েছে। আমাদের শিল্পচর্চা অযাচিত বিধি-বিধান, নিষেধাজ্ঞা, দমন-পীড়ন থেকে মুক্ত হলেও সেই মনস্তাত্ত্বিক আঘাত থেকে জনগণের আজও মুক্তি মেলেনি। শিল্পচর্চা আমাদের সেই মুক্তি ও স্বতঃস্ফূর্ততা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম। তাই শিল্পচর্চা আমাদের সামাজিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রে স্থাপন খুবই জরুরী। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে দেশব্যাপী একটি উৎসবমূখর পরিবেশ সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে চলেছে। সেই সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই আমাদের এই আয়োজন।
নাটকের নির্দেশক অনিক কুমার বলেন, পক্ষকালব্যাপী এই প্রযোজনাভিত্তিক কর্মশালার মাধ্যমে আমরা সময়কে বন্দি করার প্রয়াস নিয়েছি। চেষ্টা করেছি ‘ধুলোমাটির চিৎকার’ প্রযোজনার মাধ্যমে এমন এক প্রজন্মের গল্প বলতে- যারা আশার আলো ছড়ায়, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায়। মঞ্চে রূপক ও প্রতীকীবাদের সমাহারে আমরা এক অভিনব ঘটনাপ্রবাহ সৃষ্টি করছি, যেখানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মশাল প্রজ্বলিত হয়। এখানে প্রতিটি চরিত্র যেন একেকটি দীপশিখা অন্ধকার ভেদ করে সামনে এগিয়ে চলার প্রতিচ্ছবি। ইতিহাসের কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ ছিঁড়ে নতুন ভোরের বার্তা শোনায় আমাদের এই প্রয়াস।
নাটকের অভিনয়ে ছিলেন অনুপ, আল মামুন, রুমা পারভীন, রেজওয়ান, শামীম, সজীব, আসিফ, মনিকা, হ্যাপি, খেয়া, তায়েবা, স্বাধীন, ফয়সাল, রাসেল, হাবিব, রাফিদ।
নাটকের সমন্বয়কারী সাগর, মিউজিক টিমে রেজওয়ান, মনিকা, হাবিব, খেয়া, আসিফ, অনুপ, আলোক পরিকল্পনায় অনিক, মেকআপে সঞ্জীব ভৌমিক, প্রপস নির্মাণে রং মিস্ত্রি রাফিদ।