পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দৌলতদিয়া পারে ৪ ও ৫নং ফেরি ঘাটের র্যাম্প ডুবে যায়। দুর্ঘটনা এড়াতে ঘাট দুইটি ব্যবহারের জন্য সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয়। এদিকে দৌলতদিয়া পারে ১,২ ও ৬নং ফেরি ঘাট দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। তবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৬নং ঘাট সচল করা হয়েছে। বর্তমান দৌলতদিয়া পারে ৭টি ঘাটের মধ্যে ১,২,৪ ও ৫নং ফেরি ঘাট বন্ধ রয়েছে। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৮০ সেন্টিমিটার।
দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকা সরেজমিন ঘুরে এবং ঘাট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে পদ্মা নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেতে থাকে। সকাল ১০টা পর্যন্ত ৮০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পায়। দৌলতদিয়া পারে ফেরি ঘাটগুলো লো-লেভেল থাকায় পানিতে র্যাম্পগুলো ডুবে যায়। দুর্ঘটনা এড়াতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ৪ ও ৫নং ফেরি ঘাট সাময়িক ভাবে বন্ধ ঘোষণা করেন। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ৬নং ফেরি ঘাট সচল করা হয়।
শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায় বিকল হয়ে যাওয়া ফেরি ঘাট গুলো সচল করা সম্ভব হয়নি। তবে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন সন্ধ্যার মধ্যে দৌলতদিয়া পারের র্যাম্প ডুবে যাওয়া ৪ ও ৫নং ফেরি ঘাট সচল করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর সার্ভেয়ার পাপ্পু কুমার জানান, ফেরি ঘাটের র্যাম্পগুলো লো-লেভেল থেকে মিড-লেভেল নেওয়া কাজ চলমান রয়েছে। তবে বিআইডব্লিউটিএ’র নিজস্ব রেগার পাটুরিয়া ঘাটে থাকায় একটু সময় লাগছে। রেগার আসলে দৌলতদিয়া পারের ঘাট গুলো মেরামত করতে বেশি সময় লাগবে না।
এদিকে হঠাৎ দৌলতদিয়া পারের ঘাটগুলো পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ২টি ঘাট বন্ধ থাকায় যাত্রীবাহী পরিবহন ও পন্যবাহী ট্রাক নদী পারাপারে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের ৫কিঃমিঃ পন্যবাহী ট্রাক এবং ৩কিঃমিঃ যাত্রীবাহী ও পচনশীল মালবাহী ট্রাকের দুইটি সারি রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক প্রফুল্য চৌহান জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমান ছোট বড় ১৮টি ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিটি ফেরির সময় বেশি ব্যয় হচ্ছে। যে কারণে দৌলতদিয়া পারে কিছু যানবাহন ফেরি পারের অপেক্ষায় রয়েছে।
এদিকে প্রচন্ড গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় ফেরি পারের অপেক্ষায় থেকে রমজান মোল্লা নামের এক ব্যক্তি জানান, ৩ঘণ্টার অধিক সময় দৌলতদিয়া ঘাটে এসেছি। ঘাটে যানজট না থাকলে এত সময় ঢাকায় গিয়ে পৌঁছাতে পারতাম। কিন্ত ঘাটের সমস্যার কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকেও ফেরি পার হতে পারছি না। কখন যেতে পারবো সেটাও বলতে পারছি না।
যাত্রীবাস সাকুরা পরিবহনের এক চালক জানান, ১/২ ঘণ্টা ফেরি ঘাটে অপেক্ষা স্বাভাবিক। কিন্ত ৪/৫ ঘণ্টা অসহ্য যন্ত্রনা। এত সময় গাড়ীর সিটে প্রচন্ড গরমে বসে থাকা অসম্ভব হয়ে পরে। যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে থাকে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দুর্ভোগ সারাবছরের।
সর্বশেষ :
পদ্মায় পানি বৃদ্ধির কারণে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে বন্ধ থাকা ঘাট দুটি শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে স্বাভাবিক হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে ঘাট দুটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়ায় সাতটি ঘাটের মধ্যে চারটি চালু ছিল। হঠাৎ পদ্মা ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪ ও ৫ নম্বর ঘাটের পন্টুনের উপর পানি উঠতে থাকে। পন্টুনে পানি উঠতে থাকায় ফেরিতে যানবাহন উঠানামা বন্ধ হয়ে গেলে ঘাট দুটি বন্ধ রাখা হয়। এরপর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঘাট দুটি নিম্ন স্তর থেকে তুলে মধ্য স্তরে স্থাপন করা হয়। এরপর দুটি ঘাটে ফেরি ভীরতে থাকে। পদ্মা নদীতে গত ২৪ ঘন্টায় অস্বাভাবিক ভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় দৌলতদিয়া প্রান্তে পদ্মা নদীর পানি ৮০ সেঃমিঃ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ এর সহকারী প্রকৌশলী শাহ্ আলম জানান, নদীর পানি বৃদ্ধি বা পানি কমার সাথে ঘাটের বিভিন্ন স্তর স্থাপন করতে হয়। এটি আমাদের নিয়মিত কাজ। তবে ঘাট মেরামতের রেকার দৌলতদিয়া প্রান্তে থাকলে আরো দ্রুত ঘাট স্বাভাবিক হতো।