পদ্মা নদীর পার ফসলি জমি। মাটি খনন হচ্ছে অবাদে। পদ্মা নদীর তীর দিয়ে ফসলি জমি খনন করার কারণে ভাঙছে নদী। গৃহহীন হচ্ছে শতশত মানুষ। কমে আসছে আবাদি জমি। নতুন করে নদী ভাঙন আতংকে এলাকাবাসী। এমন চিত্র রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী। প্রতিনিয়ত দিনের আলোতে ফসলি জমি খনন করে ভরাট বালু বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী মহল। মাটি যাচ্ছে স্থানীয় ইট ভাটিতে। স্থানীয় এলাকাবাসী একাধিকবার বাধা দিলেও অদৃশ্য কারণে বন্ধ হচ্ছে না মাটি বিক্রি। বরং দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরেজমিন গোয়ালন্দ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট সংলগ্ন এবং দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের সামনে থেকে মাটি বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার ট্রাক মাটি যাচ্ছে স্থানীয় ইট ভাটিতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে জেলালসহ কয়েকজন এই মাটি উত্তোলনের সাথে জড়িত। দৌলতদিয়া ১নং বেপারী পাড়ার বাসিন্দা জয়নাল বেপারী (৫৯) দুঃখ করে জানান, স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েছি। মাটি কাটা বন্ধ হয়নি বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা এলাকাবাসী অসহায় হয়ে পড়েছি। তিনি বলেন, শুকনো মৌসুমে মাটি কাটার কারণে প্রতিবছর নদী ভাঙনের কবলে পড়ে শতশত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে মাটি কাটা বন্ধ হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দা হেলাল বেপারী বলেন, মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে আমরা নিরুপায়। এরা যেন সকল ক্ষমতার উৎস। না হলে শতশত পরিবারের বাধার মুখে এরা ফসলি জমি থেকে মাটি বিক্রি করে কিভাবে। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর নদী ভাঙনে শতশত পরিবার গৃহহীন হচ্ছে। রাস্তার পাশে বসবাস করছে অনেকে। কিন্ত মাত্র কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মোজাম্মেল নামের এক যুবক বলেন, মাটি খননের মত অন্যায় কাজের বিচার কার কাছে দেব। যাদের কাছে বিচার দেব তারা নিজেরা মাটি বিক্রি করছে। আমরা যাবো কার কাছে। সুতরাং নিরব হয়ে মাটি খেঁকুদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছি।
নাম প্রকাশ না শর্তে অনেকে বলেন, ঘর থেকে বের হতে পারি না। কোন খাবার খেতে পারি না। চার দিকে শুধু বালু আর বালু।
দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহিদুল ইসলাম বলেন, স্কুলের সামনে থেকে যেভাবে প্রতিনিয়ত মাটি খনন করে বিক্রি হচ্ছে এতে স্কুল ও মহাসড়ক নদী ভাঙন আতংকে রয়েছে। মাটি খনন রোধ করতে না পারলে আগামী বছর কয়েকটি গ্রাম ও দৌলতদিয়া মডেল হাই স্কুল সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে চলে যাবে। সুতরাং মাটি খনন করে বিক্রি করা এখনি বন্ধ করতে হবে। মাটি ব্যবসায় জেলাল বলেন, জমির মালিকদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে ক্রয় করে মাটি নিচ্ছি। জমির মালিক যদি মাটি বিক্রি না করে তাহলে আমরা নিব কিভাবে। তিনি আরও বলেন, এই মাটি ব্যবসার সাথে অনেকে জরীত আছে। গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আজিজুল হক খান জানান, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। এমন অভিযান আমাদের চলমান থাকবে। আমরা কোন মাটি ব্যবসায়ীদের অনৈতিক সুযোগ নিচ্ছি না।