আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রাজবাড়ীতে বোরো ধানের ফলন ভাল হয়েছে। পাকা ধান কেঁটে ঘরে নিতে পারায় কৃষাণ-কৃষাণীর মুখে হাসি ফুঁটেছে। পদ্মা পারের কৃষকেরা সারা বছরের ধান ঘরে তুলতে পেরেছে। পদ্মা কন্যা রাজবাড়ী জেলা। ৫টি উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজবাড়ী জেলায় ৪টি উপজেলা পদ্মা নদী পাড়ে অবস্থিত। প্রতি বছর নদী ভাঙনে শতশত হেক্টর আবাদি জমি নদী গর্ভে যাচ্ছে। তারপরও পদ্মা পাড়ের সাধারণ মানুষ বুক ভরা আশা নিয়ে বোরো ধান আবাদ করে থাকে। অসময়ে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কখনও সেই ধান ডুবে যায়। কিন্ত এবার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পূর্বে বোরো ধান কাটতে পেরেছে কৃষক-কৃষাণীরা।
রাজবাড়ী কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার ২৫০ হেক্টর নিচু জমিতে বোরো ধান লাগানো হয়। বোরো ধান দুই প্রকার। কালো বোরো এবং ধলো বোরো। ফলন কম হলেও বোরো ধান আবাদে ব্যয়ও কম। অল্প ব্যয়ে বোরো ধান লাগানো সম্ভব। সার, পানি সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। পদ্মা পারের বসতিদের আগ্রহ বোরো ধান আবাদ করতে। তবে প্রতি বছর অসময়ে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়া বোরো ধান ডুবে যায়। কিন্ত এবার রাজবাড়ী জেলার সাধারণ কৃষক সহজে পাকা বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছে। ফলনও ভালো হয়েছে।
ধান ঘরে তুলার জন্য কৃষক-কৃষাণীরা সারাদিন পরিশ্রম করছে। ধানের সাথে গরুর খাবারের খড়ও সংগ্রহে রাখার জন্য কাজ করছে। এলাকার কৃষক-কৃষাণীরা হাসি মুখে আনন্দে নিয়ে কাজ করছে। এসময় কৃষক মফিজ উদ্দিন শেখ জানান, ১০/১২ বছর পূর্বে পদ্মা নদীর ভাঙনের কারণে বসত বাড়ি সহ সকল আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে যায়। গত ৩ বছর পূর্বে জেগে উঠেছে নদীতে ভেঙে যাওয়া আবাদি জমি। সেই জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবার বোরো ধান ভাল হয়েছে। সারা বছরের খাবার ঘরে তুলতে পেরেছি। এতে পরিবারের সকলের মুখে হাসি ফুটেছে।
সাবেক ইউপি সদস্য মুনসুর (মেম্বার) শেখ বলেন, নদী ভাঙনের কারণে রাস্তার পাশে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছি। তবে গত কয়েক বছর পূর্বে ভেঙ্গে যাওয়া জমিতে চর পরেছে। সেই জমি আবাদের যোগ্য হওয়ায় বোরো ধান লাগিয়েছি। ধানও ভাল হয়েছে। তিনি আরও বলেন এরকম ধান প্রতি বছর হইলে পদ্মা নদীর পারের সাধারণ মানুষের আর কোন প্রকার কষ্ট থাকতো না।
আম্বিয়া নামের এক কৃষাণী বলেন, বাড়ী-ঘর নদীতে ভেঙ্গে যাওয়ার পর খাবারের কষ্ট করেছি। এখনও করি। কিন্ত এবার ভেঙ্গে যাওয়া জমিতে চর জেগে উঠেছে। সেই জমিতে আবারও কৃষক আবাদ শুরু করেছে। এবার পদ্মা নদী পার এলাকায় সকল কৃষক বোরো ধান কাঁটতে পেরেছে। ধান ঘরে তুলতে পারায় আমাদের মুখে হাসি ফুঁটেছে।
রাজবাড়ী কৃষি উপপরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর জানান, বোরো ধান জেলায় অনেক কম আবাদ হয়। ফলনও তেমন ভাল হয় না। তবে এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলন অনেক ভাল হয়েছে। কৃষক-কৃষাণী বোরো ধান ঘরে তুলতে পেরেছে।