“অসমতা দুর করি, এইডস মুক্ত দেশ গড়ি” প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গোয়ালন্দে পালিত হলো বিশ্ব এইডস দিবস। এ উপলক্ষে পালন করা হচ্ছে নানা জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি। রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও পায়াকট বাংলাদেশ পালন করেছে এ দিবসটি। দিবসটি উপলক্ষে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হতে র্যালী বের হয়ে দৌলতদিয়া রেল স্টেশন প্রদক্ষিণ করে ওই একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে দৌলতদিয়া পায়াকট বাংলাদেশ অফিসে আলোচনা সভা কুইজ প্রতিযোগীতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। এসময় দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সৌরভ কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে ফিল্ড অ্যানিমেটর মো. সাজ্জাদ হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্যে রাখেন দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার আলী, পায়াক্ট বাংলাদেশ সংস্থার ডিআইসি ম্যানেজার মজিবুর রহমান খান জুয়েল, গোয়ালন্দ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আজু সিকদার, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শফিক শামীম, দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহকারি ব্যবস্থাপক বিকাশ চন্দ্র দত্ত, দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার গোয়ালন্দ প্রতিনিধি মোজাম্মেল হক লাল্টু, দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ফিল্ড অ্যানিমেটর শরিফ হোসাইন, প্যারামেডিক হারুন-অর-রশীদ, শিহাব উদ্দিন, মোস্তাকিন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, তুলনামূলকভাবে অন্যান্য দেশের থেকে বাংলাদেশে এইডসে আক্রান্তের হার কম হলেও ঝুঁকিতে রয়েছে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর যৌনকর্মী ও পল্লীতে আসা খদ্দের। অবাধ মেলামেশার জন্য যৌনকর্মী ও খদ্দেরদের সহজেই এইডস রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানে আসা খদ্দেরসহ পল্লীর যৌনকর্মী ও বাসিন্দারা মরণব্যাধি এইডসের ঝুঁকির মুখে রয়েছে। ইতিমধ্যে গত দু-বছরে দৌলতদিয়া যৌনপল্লী হতে দুজন এইডস রোগী সনাক্ত হয়েছে। তাছাড়া এসপি, ডিজিএইচএস এর তথ্য সুত্রে দেশে ২০২১ সালে সংক্রমিত হয়েছে ৮৭৬১ জন, শুধুমাত্র ২০২১ সালে নতুন এচআইভি সংক্রমিত হয়েছে ৭২৯ জন, ২০২১ সাল পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে ১৫৮৮ জন। শুধুমাত্র ২০২১ সালে মৃত্যু বরণ করেছে ২০৫ জন, বাংলাদেশে আগত রোহিঙ্গা শরনার্থীদের মাঝে নতুন এইচআইভি সনাক্ত ১৮৮ জন।
দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা গাড়ীর চালকসহ প্রতিদিন কয়েক হাজার খদ্দের এখানে প্রবেশ করেন। পল্লীর একাধিক সূত্রে জানা যায় এখানে আসা বেশির ভাগ খদ্দেরই দৈহিক মিলনে কনডম ব্যবহারে আগ্রহী না। প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসটিডিসহ নানাবিধ যৌনরোগের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।
সরেজমিন যৌনপল্লীর বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার পুরুষ এ পল্লীতে যাতায়াত করে। এর মধ্যে স্কুলছাত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলার এলাকা থেকে আসা গাড়ীর চালকরাও রয়েছে। যার বেশির ভাগ লোকজন দৈহিক মিলনে কনডম ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনাগ্রহী। খদ্দেরের ইচ্ছা ও বেশি টাকার লোভে অনেক মেয়েই প্রতিনিয়ত অনিরাপদ মিলন করে থাকে। এ ছাড়া পল্লীর বহু মেয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। তাদের আয়-রোজগার কম। নেশার টাকা যোগানো, খাবার ও ঘর ভাড়ার টাকা যোগাতে এ সকল মেয়েরা দৈহিক মিলনে নিজেদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করার সুযোগ পায় না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছু মেয়ে রয়েছে বাড়িওয়ালিদের কাছে জিম্মি। যার ফলে দৈহিক মিলনে এদেরও নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবার সুযোগ নেই। অর্থাৎ অবাধ যৌনতার কারণে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে এইচআইভি এইডস আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর পাশে অবস্থিত বেসরকারি সংস্থা দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. জুলফিকার আলী জানান, এখানে এইচআইভি এইডস বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছি আমরা। বিনামূল্যে কনডম ও যৌনরোগের ৪ টি পরীক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবার জন্য এখানে মেডিকেল অফিসার,প্যারামেডিক, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ফিল্ড অ্যানিমেটর, কাউন্সিলর,পিয়ার এডুকেটরের মাধ্যমে নানাবিধ যৌনরোগের পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।
সংস্থাটি সচেতনতা বাড়াতে পল্লীতে তাদের স্বাস্থ্য কর্মী বাহিনী প্রতিদিন উঠান বৈঠক, আলোচনা সভা, পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করছেন। তবে যৌনজীবীদের নানাবিধ ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে তাদের এ কর্মসূচিগুলোর সুফল পেতে বেগ পেতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে দৌলতদিয়া গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও আলোচনা সভার সভাপতি ডা. সৌরভ কুমার বিশ্বাস বলেন, দৌলতদিয়া এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তর এবং দেশের বৃহত্তম একটি যৌনপল্লী। এখানকার যৌনকর্মী ও খদ্দেররা মারাত্মক এইডস ঝুঁকিতে রয়েছেন। এখানে সবাইকে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। সচেতন না হলে সারাদেশ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
এইডস ও অন্যান্য যৌন রোগের ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগ এ পল্লীতে নানাবিধ কাজ করছে। তাদের কাজের নিয়মিত মনিটরিং ছাড়াও জটিল এবং সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে তারা চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন।