রাজবাড়ীতে ভয়াবহ মাদক কোকোলামিন দিয়ে পথচারীদের নিঃশ্বাসে প্রয়োগের মাধ্যমে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে একটি চক্র। এ চক্রের খপ্পরে পড়ে তাদের হাতে স্বেচ্ছায় নিজের মূল্যবান জিনিসপত্র, স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা তুলে দিচ্ছেন অনেকেই। মঙ্গলবার এমন একটি ঘটনা ঘটে রাজবাড়ী আদালত চত্ত্বরে।
সদর উপজেলার পাচুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা নাসিমা বেগম জানান, তিনি আদালতে ভাইয়ের জামিনের জন্য এসেছিলেন। এরপর দুজন লোক তার ভাইকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে পারবে বলে তাকে ১০টাকার নোট পড়ে দেয়। দুজন লোক তাকে আদালত চত্ত্বরের বাইরে নিয়ে কান থেকে স্বর্ণের দুল খুলে নেয়। তিনি সব দেখেছেন। কিন্তু কিছু বলতে পারেননি। কিছুক্ষণ পর যখন তার বোধ শক্তি ফিরে আসে তখন চিৎকার দেন।
এর আগে গত ১১ অক্টোবর বিকেলে রাজবাড়ী শহরের এক নম্বর রেলগেট এলাকায় এ চক্রের খপ্পরে পড়ে দামি ফোন, সোনার আংটি, চেইন ও নগদ টাকা খোয়ান রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের মাস্টার্সের ছাত্রী প্রিয়া আক্তার। এ ঘটনায় ১৫ অক্টোবর প্রিয়ার মা ছালমা বেগম বাদী হয়ে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী প্রিয়া আক্তার বলেন, ১১ অক্টোবর বিকেল ৫টার দিকে রাজবাড়ী বাজারে বিকাশ থেকে টাকা তুলে হেঁটে বিনোদপুরে বাসায় ফিরছিলাম। এক নম্বর রেলগেট এলাকায় পৌঁছালে ২৫ বছর বয়সী এক যুবক তার মায়ের অসুস্থতার কথা বলে আমার কাছে আর্থিক সাহায্যের আকুতি জানান। আমি তাকে পাত্তা দেইনি। এরইমধ্যে সেখানে উপস্থিত হন আরও এক যুবক (৩২)। ওই যুবক আমাকে বলেন, আপু এই ছেলেটা খুব অসহায়। ওর মা খুব অসুস্থ, আসেন আমরা দুজন মিলে ওকে সাহায্য করি। এতে ওর খুব উপকার হবে। তখন আমি বলি যে, ‘না আমি এখন বাসায় যাবো। আমি কোনো সাহায্য করতে পারবো না।’ একথা বলে আমি চলে আসার সময় ওই লোকটি আমার মুখের সামনে মেডিসিনযুক্ত একটি কাপড় ধরে। তখন আমার কোনো সেন্স কাজ করছিল না। আমি বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। আমি সবকিছু দেখতে পারছিলাম, শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু কোনো কথা বলতে পারছিলাম না। কারও যে সহযোগিতা নেব এমন কোনো বোধশক্তি আমার কাজ করছিল না। তখন দুই যুবকের সঙ্গে আরও এক যুবক যুক্ত হয়। তারা তিনজন আমাকে তাদের সঙ্গে যেতে বলে। আমিও হেঁটে হেঁটে তাদের সঙ্গে যাই।
প্রিয়া বলেন, যখন সালমা হোটেলের পাশে পৌঁছাই তখন আমার কিছুটা বোধশক্তি কাজ করে। আমি তাদের বলি, আপনারা কেন আমাকে ডাকছেন? তখন তারা আবারও আমার মুখের কাছে ওই মেডিসিনযুক্ত কাপড় ধরলে আমি আবারও বোধশক্তি হারিয়ে ফেলি। এরপর তারা আমাকে পুলিশ সুপারের বাসভবনের সামনে দিয়ে, সিভিল সার্জনের বাসভবনের সামনে দিয়ে জেলা স্কুলের (রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়) সামনে নিয়ে আমার হাত থেকে ব্যাগটি নিয়ে নেয়। ব্যাগ থেকে মোবইল, তিন হাজার টাকা ও হাত থেকে স্বর্ণের আংটি এবং গলা থেকে স্বর্ণের চেইন খুলে নেয়। তখন আমার জ্ঞান ছিল। কিন্তু কথা বলার মতো কোনো বোধশক্তি ছিল না।
প্রিয়া বলেন, আমি তাদের কথামতো আমার সবকিছু দিয়ে দেই। সবকিছু নেয়ার পর তারা আমাকে বলে, আপনি সোজা যান। সোজা মিষ্টি বাড়ি দোকানের সামনে যাবেন। তখন আমি তাদের কথামতো সোজা হেঁটে মিষ্টি বাড়ি দোকানের সামনে যাই। পেছনে একবারের জন্যেও তাকাইনি। মিষ্টি বাড়ি দোকানের সামনে আসার পর আমার কিছুটা বোধশক্তি কাজ করে। আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করতে গেলে দেখি ব্যাগে ফোন নেই। তখন আমি বুঝতে পারি যে আমার সবকিছু নিয়ে গেছে তারা।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, একটি সংঘবদ্ধ চক্র এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি ও পুলিশি টহল বৃদ্ধি করেছি। এ চক্রের মূল উৎপাটন করার জন্য আমাদের থানা পুলিশ, জেলা পুলিশ কাজ করছে। পাশাপাশি ডিবি পুলিশও কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।