রাজবাড়ীতে রেলের নিজস্ব মালিকাধীন প্রায় ২৮শ কোটির টাকার সম্পদ বেদখল হয়ে গেছে। নদী গর্ভে প্রায় ৫শত কোটি টাকার সম্পদ। জেলা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে লিজ দেওয়া রয়েছে প্রায় ৭৫ কোটির টাকার সম্পদ এবং সাধারণ মানুষের লিজ দেওয়া রয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকার সম্পদ। এছাড়াও রেলের মালিকানাধীন আবাসিক ভবনগুলোও বেদখল হয়ে আছে বছরের পর বছর। ব্যবহার না করায় গুরুত্বপূর্ন ভবন গুলো অকেজো হয়ে পরে আছে দীর্ঘদিন যাবৎ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজবাড়ী জেলা রেলের নিজস্ব জমি রয়েছে ৫হাজার ১শত ৩৯ বিঘা। এর মধ্যে ২শত ৭৩ বিঘা জমি পদ্মা নদী গর্ভে চলে গেছে। ৪৫ বিঘা জমি রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনকে লিজ দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ লিজ নিয়েছে ৬ বিঘা জমি। বেদখল রয়েছে ১৬শত ৬৫ বিঘা জমি। বর্তমান রেল ব্যবহার করছে ৩হাজার ৪শত ২০বিঘা জমি।
রাজবাড়ী শহরের জমি’র সর্ব মূল্যে ৫লাখ টাকা শতাংশ। সেই হিসেবে বেদখল ১৬শত ৬৫ বিঘা জমি’র বর্তমান বাজার মূল্য ২হাজার ৭শত ৪০ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। নদী গর্ভে চলে গেছে ২শত ৭৩ বিঘা জমি। যে জমির বর্তমান বাজার মূল্যে হিসেবে ৪শত ৫০ কোটি, ৪৫ লক্ষ টাকা। জেলা প্রশাসক লিচ নিয়েছে ৪৫বিঘা জমি। যে জমি’র বর্তমান বাজার মূল্যে ৭৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সাধারণ মানুষ লিজ নিয়েছে ৬বিঘা জমি।
যার বর্তমান বাজার মূল্যে ৯ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এর পরও শহরের মধ্যে রেলের নিজস্ব ৩শতাধিক কোয়াটার বেদখল হয়ে আছে। গুরুত্বপূর্ন ভবনগুলোও অকেজো হয়ে পরে আছে বছরের পর বছর।
অনুসন্ধানে আরোও জানা যায়, রাজবাড়ী রেলের নিজস্ব জায়গা বেদখলে পিছিয়ে নেই রাজনৈতিক সহ সামাজিক সংগঠনগুলো। রেলের নিজস্ব জায়গায় জামাত-বিএনপি-জাতীয় পার্টি সহ অনেক সামাজিক সংগঠনগুলো দখল করে নিজস্ব অফিস এবং ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। অনেকে দোকান-মার্কেট এবং বহুতল ভবন তৈরি করে ভাড়া দিয়েছে। রাজবাড়ী রেলের নিজস্ব মালিকানাধীন জায়গা-জমি, ভবন, খাল, পুকুর, আবাসিক ভবন, মাঠ দখল হওয়ার কারণে সুন্দরর্য হারিয়েছে।
রাজবাড়ী রেল সেকশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ রেলে চাকরী করি। প্রয়োজনের তাগিদে রেল কোয়াটারে থাকার প্রয়োজন। কিন্ত রাজবাড়ী রেলের নিজস্ব কোয়াটারগুলো বেদখল হয়ে যাওয়ায় আমরা থাকতে পারছি না। বাধ্য হয়ে উচ্চ মূল্যে অন্য জায়গায় ভাড়া থাকতে হয়। তিনি আরোও বলেন, চাকরী থেকে অবসর নিয়েছে ১৫/২০ বছর পূর্বে। অনেকে বেঁচে নেই। তাদের পরিবারগুলো এখন পর্যন্ত রেলের নিজস্ব কোয়াটারে রয়েছে। কোয়াটারের আশ-পাশে ঘর তুলে অনেকে ভাড়া দিয়েছে। কিন্ত যাদের জন্য বরাদ্ধ এই সকল কোয়াটার তাদের থাকার কোন কোয়াটার ফাঁকা নেই।
রাজবাড়ী জেলা বার এসোসিয়েশন এর সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট স্বপন কুমার সোম জানান, রাজবাড়ী জেলায় রেলের গুরুত্বপূর্ন জায়গা, কোয়াটার দখল হয়ে আছে। অনেকে রেলের জায়গা নিরব দখল করে ভবন, মার্কেট তৈরি করেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত রেলের জায়গা-জমি উদ্ধার করে কাজে লাগানো। না হলে পর্যায়ক্রমে রেলের অবশিষ্ট জায়গাও দখল হয়ে যাবে।
রাজবাড়ীর প্রবীণ সাংবাদিক বাবু মল্লিক জানান, রেলের নিজস্ব জায়গার বৃহত্তর একটি অংশ দখল হয়ে গেছে। যে কারণে রেলের সুন্দরর্য নষ্ট হয়ে গেছে। রাজবাড়ী রেল সেকশন রক্ষা করতে হলে অবশ্যই রেলের জায়গা উদ্ধার করতে হবে। রেলের নিজস্ব মালিকাধীন আবাসিক ভবনগুলো উদ্ধার করতে হবে।
পাকশী রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন রেলের নিজস্ব জায়গা বেদখল হওয়ার সংবাদ নিশ্চিত করে জানান, কি পরিমাণ জায়গা বেদখল হয়ে আছে সেটা সঠিক বলা যাবে না। তবে খুব তারাতারি দখলকৃত জায়গা উদ্ধার অভিযান করা হবে।