কৃষি প্রধান জেলা রাজবাড়ী। এই জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে ৪টি উপজেলা পদ্মা নদীর পারে অবস্থিত। বর্ষা মৌসুমে জেলার প্রতিটি উপজেলা এলাকায় পানি থৈই থৈই করে। যে কারণে প্রতিটি ফসল ভাল উৎপাদন হয়। তবে পদ্মা নদীর পারে অবস্থিত উপজেলাগুলো পাট চাষে আগ্রহী বেশি। কৃষি প্রধান এই জেলার মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। রাজধানী সহ বিভিন্ন জেলায় যোগাযোগের অবস্থাও অনেক ভাল। সড়ক-রেল ও নৌরুটের সুবিধা রয়েছে এই জেলায়।
জেলার পাংশা, কালুখালী, সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলা পদ্মা নদীর পারে অবস্থিত। পদ্মা নদীর পার ঘেঁষা উপজেলাগুলোর কৃষক পাট চাষে আগ্রহী বেশি। পাটের উৎপাদনও অন্য ফসলের চেয়ে ভাল হয়। অল্প ব্যয়ে লাভও বেশি করা সম্ভব হয়।
রাজবাড়ী কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫টি উপজেলায় ২০২২-২৩ ইং মৌসুমে ৩ লাখ, ৭৪ হাজার ১১৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি পাট উৎপাদন হয়েছে।
গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. খোকন উজ্জামান জানান, আবাদি জমিতে বর্ষার পানি থাকলে ফসল ভাল হয়। সেই হিসেবে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার সকল এলাকায় বর্ষার পানি থাকায় পাটের উৎপাদন ভালো হয়েছে। তিনি আরো জানান, বর্ষার পানি পেলে সেই জমিতে কমপক্ষে ২মণ ফসল বেশি হয়। সেই হিসেবে গোয়ালন্দ উপজেলায় পাটের উৎপানও অনেক ভাল।
পাট চাষী আব্দুল মালেক বেপারী বলেন, আমরা কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। তবে এই মৌসুমে পাট চাষ বেশি করি। কারণ পাট চাষ করতে খরচ কম, লাভ বেশি। তিনি আরো বলেন, পদ্মা নদীর পারে থাকার কারণে পাট কাঁটার পর পচনের জন্য জাগ দেওয়া যায় সহজে। এবং বর্ষা মৌসুমে বেশির ভাগ জমি পানির নিজে থাকে। প্রতি বছর বর্ষার পানি আবাদি জমিতে আসলে ফসল উৎপাদন বেশি হয়। তিনি বলেন, এবার প্রায় ১২বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। আশা করি অনেক লাভবান হবো।
পাংশা উপজেলার সেনপাড়া গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ বলেন, পাট চাষ করলে লাভ হওয়ার সম্ভবনা থাকে বেশি। কারণ পাটের মূল্য কম হলেও পাট খড়ি’র মূল্য অনেক বেশি। সুতরাং পাট চাষে লোকসান হয় না। বরং অন্য ফসলের চেয়ে লাভ বেশি হয়।
রাজবাড়ী জেলার উজানচর ইউনিয়নের চাষী শ্রী বিপ্লব রায় বলেন, রাজবাড়ী জেলার চাষ চাষের উপর নির্ভর করে টেষ্টাইল মিল তৈরি হয়েছে। এই এলাকায় পাট চাষীরা নগদ টাকায় সহজে পাট বিক্রি করতে পারেন। যে কারণে পাট চাষে অনেক কৃষক আগ্রহী।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর জানান, পাট চাষে খরচ কম। আয় বেশি। তিনি বলেন, পাট উৎপাদন করতে পানি প্রয়োজন হয়। রাজবাড়ী জেলা পদ্মা নদীর পারে অবস্থিত হওয়ায় সহজে খরচ বিহীন পাট পচনের জন্য কৃষক ব্যবস্থা নিতে পারে। এবং রাজবাড়ী জেলায় একাধিক পাটের মিল থাকায় সহজে বিক্রি করতে পারেন। সেকারণে রাজবাড়ী জেলায় অন্য জেলার চেয়ে পাট উৎপাদন একটু বেশি হয়। তিনি আরো বলেন, এবার রাজবাড়ী ৫টি উপজেলায় ৩ লাখ, ৭৪ হাজার ১১৫ বিঘা জমিতে পাট চাষ হয়েছে। সেই হিসেবে রাজবাড়ীতে এবার ৩৭লাখ ৪১হাজার ১৫০ মণ পাট উৎপাদন হবে এই জেলায়।