আমি আমার ‘জীবন চলার চক্রবাঁকে কাব্য গ্রন্থের’ ‘শ্রেষ্ঠ ধন’ কবিতায় বলেছি
নহে সোনা রুপা হিরক জহরত
বনভুমি নদ-নদী
নহে কো সাগর খনিজ পাহাড়
ভাব যারে নিরবধি।
জাতিত্ব বোধি নেতৃত্ব যারা
দেশ-প্রেমিক সচেতন
বরেণ্য তারা সবার উপর
জাতির শ্রেষ্ঠ ধন।
তখন আমার এই কবিতার উৎস কেন্দ্রে ছিলেন হাজারও বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তখন আমি ভাবি নাই আমার জীবদ্দশায় এই কবিতার আর এক জীবন্ত ছবি দেখতে পাব। পদ্মা সেতু স্বাধীনতা-পরবর্তী জাতির শ্রেষ্ঠ উপহার। বিশ^কে কাঁপিয়ে দেওয়া জাতীয় বীর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাছিনা- জাতির অহংকার। বাঙ্গালির বাংলার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে জাতির জন্যে পদ্মা সেতুর মহা মহিমান্বিত উপহার প্রদানের মুহুর্তে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার প্রতি থাকবে আমার, জীবনের সমস্ত সত্ত্বা জড়ানো সশ্রদ্ধ অভিবাদন। মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় শুধু জাতির নহে অনগ্রসর বিশ^ জাতি সত্ত্বার আত্মনির্ভরশীলতার দিক দর্শনে আপনি হয়েছেন বিশ^ মানবতার মহান শিক্ষক। জাতীয় স্বার্থ বিরোধী অপরিনামদর্শী দিকভ্রান্ত রাজনৈতিক মহলকে আপনি দেখিয়েছেন এবং শিখিয়েছেন জাতীয় চেতনশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বরূপটা কি?
দেশিয় এবং বহিঃবিশে^র মহা শিল্পীদের কারিগরি উৎকর্ষতায় বিশ^ নন্দিত এই পদ্মা সেতু পাল্টিয়ে দিয়েছে বাংলার রূপ বৈচিত্রটাকে। মহা থেকে মহত্মম, ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতম, পদ্মা সেতু সৃষ্টিতে রয়েছেন যতেক কর্মবীর সবার প্রতি রইল আমার আন্তরিক অভিনন্দন। পদ্মা সেতু শিল্পের কর্মকারিগর এবং সহযোগি কর্মবীর আপনার হয়ে থাকবেন বাংলার জাতীয় গুলবাগের একগুচ্ছ জীবন্ত গোলাপ।
পদ্ম সেতু বিরোধী অপরাজনীতির অপমৃত্যু এখন সময়ের দুরত্বে দিন গুনছে। এবার ওরা দেখতে পাবে কুৎসিত স্বপ্নবিলাসী ষড়যন্ত্রের পতন ঘন্টা বাজানোর সত্যের অনিন্দ্য সুন্দর স্বরূপটারে। ইতিহাস সব সময় গেয়েছে সত্যের মহাসুন্দরের জয়গান। আর মিথ্যাকে নিক্ষেপ করেছে অসত্যের দুর্গন্ধময় আস্তানায়। মাঝে শুধু দিক নির্দেশনায় আঙ্গুল উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সময়ের ব্যবধান।
ইতিহাসের কীটপতঙ্গেরা যা পাবার তাই পাবে। আমার দুঃখ শুধু বিপদগামী ইতিহাস ¯্রষ্ঠাদের নিয়ে। ইতিহাস কখনও উল্টোপথে হাঁটে না- উনারা কি করে ভুলে গেলেন সেই ঐতিহাসিক সত্যটাকে।
দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের পতনের ঐতিহাসিক নাটকের শেষ অংক শেষ হবে এবার। নাটকের সেই অংক শেষ করতেই ধীর উপায়ে এগিয়ে আসছে ২৫ জুনের স্বাধীনতার দ্বিতীয় জাতীয় অনুষ্ঠান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের স্বর্ণালী মুহুর্তটি। জাতি এখন সেই সুভক্ষনের প্রহর গুনছে। ধর্ম ব্যবসায়ির দল এবং ওদের দোসররা পাকিস্তান ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এবার ওদের পাকিস্তানী স্বপ্নও চিরতরে দুঃস্বপ্নে রূপান্তরিত হবে। ঘরে-বাইরের ষড়যন্ত্রকারীরা এখন ক্ষ্যাপা কুকুরের সাদৃশ্যে কামড়াতে উদ্যত। ওদের আকাশছোঁয়া ষড়যন্ত্রের সমাপ্তি ঘটাতে প্রমত্ত পদ্মা প্রস্তুত। এবার হবে ওদের পদ্মার বুকেই সলীল সমাধি।
১৪ দলীয় সরকারের দুরন্ত নির্ভীক জাতীয় বীর নেতৃত্ব ইতিহাসের স্বপ্নময়ী বাংলা মায়ের আদরিনি কন্যা, বাংলাদেশ তথা বিশে^র পিছিয়ে পড়া জাতিসত্তার নিজ পায়ে দাঁড়াবার পথপ্রদর্শক, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চেয়ে দেখুন, ভোরের মুক্তা ঝরা শিশিরের বুকে সুপ্রভাতের সূর্য কিরণের মতো ইতিহাস আপনাকে হাতছানি দিয়ে
ডাকছে। কানপাতুন-
বজ্র নিনাদে বলছে বাবা ঐ
ভয় নাই দুরন্ত শোন
দুপায়ে দোলে মৃত্যুভয়-কর
পদ্মা সেতু উদ্বোধন।
বাজিয়ে ডংকা যুদ্ধ দামামা
হাসু তুমি এগিয়ে যাও
চুর্ণ বিচুর্ণে সম্মুখে যা কিছু
বিজয়ের গান গাও।
গুড়িয়ে সব বাধা টর্নেডো সম
দুরন্ত দুর্বার
তোমাকেই তোমার সৃষ্টিকে জাতির
দিতে হবে উপহার।
ইতিহাস না মানা যতেক মুর্খ
নির্বোধেরা শোন
তোদের চিহ্ন নিশ্চিহেৃ দিতেই
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন।
পঞ্চাশ বছর পাড় হয়ে গেলে
শুনতে চাই না আর
এখনও বাংলায় লুকিয়ে রয়েছে
শত্রু-এ- স্বাধীনতার।
জাতির এই নব দিগন্তের নব সূর্যোদয়ের শুভক্ষণে প্রমত্ত পদ্মা তোমার কাছে আমার আহ্বান। তোমার দুরন্ত ঢেউয়ের আঘাতে চুর্ণ করে ভাসিয়ে দাও বাংলার সমস্ত অপরাজনীতির শেষ চিহ্ন। তোমার বুকের কাঁশফুলের শুভ্রতুলিতে জাতির ললাটে এঁকে দাও তুমি জাতীয় চেতনার মহাসুন্দর রাজনীতির চিত্রপট।
জাতীয় জীবনের এই শুভক্ষণে বাংলা মাগো তোমার আঁচল উঁচিয়ে ধরো। তোমার কোলে বসুক সুবর্ণ জয়ন্তির নতুন কাপড়ের নতুন মোড়কে, জয় বাংলার ফোয়ারা ছুটিয়ে- তোমার আদরের স্বাধীনতা। এখনই গর্জে উঠুক জাতির জনকের কালজয়ী কন্ঠ, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’। স্বাধীনতার সূর্য- লাল সবুজের পতাকা
উড়িয়ে আগেই বলেছে জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু
চিরজীবি হোক বাঙালির প্রিয় বাংলাদেশ।
আব্দুল মতিন মিয়া
সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য, রাজবাড়ী-২।
ও
উপজেলা চেয়ারম্যান, পাংশা, রাজবাড়ী।
লেখক, কবি ও গবেষক