চলতি বছর রাজবাড়ীতে অনাবৃষ্টি ও খরায় পাটের ফলন ব্যাহত হয়েছে। বিঘা প্রতি পাটের ফলন নেমে এসেছে অর্ধেকে। গত দুই সপ্তাহ ধরে মণ প্রতি পাটের বাজার দর কমেছে। এতে চাষীদের প্রতি বিঘা জমি থেকে উৎপাদিত পাট বিক্রি করে মোট খরচের অর্ধেকেরও বেশি লোকসান হচ্ছে। ফলন কমে যাওয়ায় চলতি মৌসুমে বিশ হাজার মে. টনেরও বেশি পাট উৎপাদন কম হওয়ায় প্রায় ৮ কোটি টাকার পাট উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি অধিদপ্তর।
রাজবাড়ী জেলা কৃষি নির্ভর। এ জেলায় পাট সহ সব ধরনের ফসল আবাদ হয়ে থাকে। চলতি পাটের মৌসুমের শুরুতে রাজবাড়ীতে অনাবৃষ্টি, অতি খরা ও তাপদাহে পাটের ফলন ব্যাহত হয়েছে চরমে। বৃষ্টি না হওয়ায় পাটের গাছ বাড়েনি ও ফলন কমেছে স্বাভাবিক ফলনের চাইতে অর্ধেকে। বিঘা প্রতি যেখানে সাত থেকে আট মণ ফলন হয়, চলতি মৌসুমে সেখানে চার থেকে সাড়ে চার মণ ফলন হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে চাষাবাদ, সার, কীটনাশক, দিনমজুর, সেচ ও পাট ধৌতকরনে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সেখানে পাটের ফলন কমে চার থেকে সাড়ে চার মণ উৎপাদন হয়েছে বিঘায়। আর মণ প্রতি এক হাজার টাকারও বেশি দাম কমে যাওয়ায় ৯/১০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রতি বিঘায় লোকসান হচ্ছে ৮/৯ হাজার টাকা। পাট আবাদে লোকসান হওয়ায় আগামীতে পাটের আবাদ কমার আশঙ্কা করছেন চাষীরা। পাট ঘরে তুলতে অতিরিক্ত টাকার যোগান দিতে হচ্ছে ধার দেনা করে। চলতি বছর জেলায় ৪৯ হাজার ১২৫ হেক্টর পাট আবাদের লক্ষ মাত্রা থাকলেও সেখানে ২ হাজার ৯৬৭ হেক্টর আবাদ কমে ৪৬,১৫৮ হেক্টর আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৮৬৫ মে. টন। সেখানে আবাদ কম ও ফলন ব্যাহত হওয়ায় ২৬ হাজার মে. টনেরও বেশি পাট উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উৎপাদন কম হওয়ায় এবছর জেলায় পাট থেকে প্রায় ৮ কোটি টাকারও বেশি লোকসান হয়েছে পাট চাষিদের। এপর্যন্ত ফসলী জমি থেকে ৮০ শতাংশ পাট কাটা শেষ হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলা সদরের বসন্তপুর ইউনিয়নের চাষি মো. রহিদুল শেখ বলেন, তিনি এবছর তিন বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। বৃষ্টি না হওয়ায় পাটের ফলন ফলন ভালো হয় নাই। এতে বিঘা প্রতি অর্ধেক উৎপাদন হয়েছে। বিগত বছর গুলোতে সাত থেকে আট মণ পাট উৎপাদন হলেও এবছর উৎপাদন হয়েছে চার মণ। এতে অর্ধেক উৎপাদন কমেছে বিঘা প্রতি। লোকসান হয়েছে ৮/৯ হাজার টাকা। তার মত অন্যান্য কৃষকের অবস্থাও একই রকম। একই এলাকার কৃষক জলিল সরদার, আখের আলী শেখ, আবু সাইদ, বাবলু কুমার রায়, নিরঞ্জন বিশ্বাসের মত অন্যান্য কৃষকরা এবছর পাট উৎপাদন করে চরম লোকসানে পরেছেন।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এবছরের শুরুতে খরা ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় পাটের ফলন ব্যাহত হয়েছে। এতে ২০ হাজার মে. টনেরও বেশি পাট উৎপাদন কম হয়েছে। কৃষক পাট বিক্রির শুরুতে বাজার দর ভালো পেলেও বর্তমানে দাম কমে যাওয়ায় তাদের লোকসান হচ্ছে। সামনে পাটের দাম বৃদ্ধি পেলে কৃষক তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে বলে তিনি জানান।