খুশির খবর, উদযাপন ও অতিথি আপ্যায়নসহ যেকোন উৎসব মিষ্টি ছাড়া জমে না। মিষ্টির জগতে বহু বছর ধরে জনপ্রিয় রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচম। এই মিষ্টির সুনাম রয়েছে জেলাসহ সারা দেশেই। প্রতিদিনই জেলা ও জেলার বাইরে থেকে ক্রেতারা আসেন ক্ষীর চমচম কিনতে। আত্মীয় স্বজন বাড়িতে আসলেও তাদের প্রথম পছন্দ থাকে এই চমচম। ক্ষীর চমচমের প্রসার বাড়াতে জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতির জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
সরেজমিনে কয়েকটি মিষ্টির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে এনেছে। পরে ওই দুধ ছাকনির সাহায্যে পরিস্কার করে নিয়ে বিভিন্ন পাত্রে রেখে দিয়েছে। এরপর বড় বড় কড়াইতে ঢেলে চুলায় উঠিয়েছে । কাঠের জ¦ালে চুলায় দীর্ঘসময় ধরে জ্বালিয়ে দুধ থেকে ছানায় রূপান্তর করা হচ্ছে। পরে হাতের সাহায্যে মিষ্টির বল তৈরি করছে ময়রার। এরপর মিষ্টির বল চুলায় জ¦ালিয়ে মিষ্টির রসে বেশ কিছুক্ষণ চুবিয়ে রাখছে। পরে দুধের তৈরি শক্ত মাওয়া ভেঙে ক্ষীর বানিয়ে চমচমের ওপর প্রলেপ দিয়ে তৈরি করছে সুস্বাদু ক্ষীর চমচম। ক্ষীর চমচম ছাড়াও হাপসি,কাপসি,বরফি,ক্ষীর সন্দেশ,কাঁচা ছানা, কালোজাম, রসগোল্লা, প্যারা সন্দেশ, কাটারি ভোগ, পাপরি সন্দেশসহ ১০০ ধরণের মিষ্টি তৈরি করা হয়।
স্থানীয়রা বলেন, রাজবাড়ীর মিষ্টি বিশেষ করে চমচম এটি ঐতিহাসিক ভাবেই এটার সুনাম দীর্ঘদিন ধরেই আছে। এই মিষ্টি রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার রপ্তানি হয়। এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হয়। আমরা আশা করবো রাজবাড়ীর মিষ্টির যে সুনাম রয়েছে তার ধারাবাহিকতা থাকবে। এবং রাজবাড়ীর চমচমের মাধ্যমে রাজবাড়ীর নাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।
রাজবাড়ীর বাসিন্দা সুরভী বলেন, রাজবাড়ীর মিষ্টি সম্পর্কে বলতে গেলে খুব কমই বলা হবে। আমার দাদা কিনে খাওয়াইছে, এখন আমার বাবা কিনে খাওয়াইছে। আমি এই মাত্র দুই কেজি মিষ্টি নিলাম। বাড়িতে আত্মিয় এসেছে। তাদের কথা মাছ-গোস্ত চাইনা রাজবাড়ীর মিষ্টি চাই। মিষ্টির এত চাহিদা যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিষ্টি নেওয়ার জন্য রাজবাড়ীতে আসে। দোকান গুলোতে ভীড় লেগেই থাকে। অনেক সময় ভীড়ের চাপে আমরা কেনার সিরিয়াল পাই না।
সঞ্জয় ভৌমিক বলেন, রাজবাড়ীর মিষ্টির চাহিদা রয়েছে প্রচুর। তবে সব দোকানের মিষ্টি না। শহরে অনেক মিষ্টির দোকান থাকলেও দুই থেকে তিনটি দোকানের মিষ্টির খুব চাহিদা। প্রতিদিন ওই কয়েকটি দোকানে ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে। যদি কোন আত্মিয়-স্বজন জানতে পারে তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাবো সাথে সাথে পোন দিয়ে বলে রাজবাড়ীর মিষ্টি নিয়ে যেতে।
মিষ্টি ব্যবসায়ী পরিমল সাহা বলেন, রাজবাড়ীর মিষ্টি খাটি দুধ দিয়ে তৈরি হয়। এই মিষ্টি যে ভালো সেটা মানুষের মুখের স্বাদই বলে দিতে পারে। আমরা সুনামের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রাজবাড়ীর মিষ্টি নিয়ে যায়। আর বিদেশের ব্যাপারটা হলে প্রবাসি যারা আছে তারা এই মিষ্টি নিয়ে যায় বিভিন্ন দেশে। সেখানেও আমরা সুনাম কুড়িয়েছি। ক্ষীর চমচমের জন্য রাজবাড়ী বিখ্যাত।
পরিমল সাহা আরও বলেন, রাজবাড়ীর মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে ১৯৯২ সাল থেকে। গত ৩০ বছরে সারাদেশে এই মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দাবি রাজবাড়ীর মিষ্টি যেন জিআই পণ্যের স্বকৃতি পায়। তাহলে আমাদের ব্যবসার আরও প্রসার ঘটবে।
ব্যবসায়ী যোগেশ ঘোষ গৌর বলেন, রাজবাড়ীর মিষ্টির ওপরে মানুষের আকর্ষণ বেশি। বিশেষ করে রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচম। এই চমচমের জন্যই রাজবাড়ী বিখ্যাত। এরবাইরেও একশত ধরনের মিষ্টি তৈরি করা হয়। এখানকার মিষ্টি খাটি গরুর দুধ দিয়ে তৈরি হওয়ায় এখানকার মিষ্টির ওপর মানুষের চাহিদা বেশি। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রাজবাড়ীর মিষ্টি যায়। অনেকেই আবার বিদেশেও নিয়ে যায় এই মিষ্টি।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, রাজবাড়ী মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। বিশেষ করে ক্ষীর চমচম ব্যবপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অন্য চমচম থেকে রাজবাড়ীর ক্ষীর চমচমের পার্থক্য হলো এই চমচমের ওপরে ক্ষীরের আবরণ থাকে যে কারণে চমচমটা খুব সুস্বাদু হয়। আমরা চেষ্টা করছি সারাদেশে এই মিষ্টির প্রচলন ও প্রসার ঘটানোর জন্য।এজন্য জেলা প্রশাসন রাজবাড়ীর ক্ষর চমচম জিআই পণ্য হিসাবে স্বীকৃতির জন্য কার্যক্রম শুরু করেছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই রাজবাড়ীর চমচমকে আমরা জিআই পণ্যের তালিকাভুক্ত করতে পারবো।