শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৫ অপরাহ্ন

থেমে আছে দৌলতদিয়া আধুনিক নৌ বন্দর প্রকল্পের কাজ ॥ বিপাকে অধিগ্রহণ করা জমির মালিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
  • Update Time : সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪
  • ১০২ Time View

রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ায় আধুনিক নৌ বন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করলেও কাজ থেমে থাকায় বিপাকে পড়েছেন জমির মালিকরা। তবে দ্রুতই দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে আধুনিক বন্দর প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা।

রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ঘাট ও মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাটকে আধুনিক নৌ বন্দরের আওতায় আনতে প্রাথমিক পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে আড়াই বছর আগে। কিন্তু এখনো কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি ভুক্তভোগীরা।

জানা গেছে, ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাটে আধুনিক নৌ বন্দরের জন্য ৩০ একর জমিসহ অবকাঠামোসমূহ একওয়ার করে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। জমি অধিগ্রহণের পর মালিকরা কোন প্রয়োজনে তাদের জমি বিক্রি করতে পারছে না। ঘরবাড়ী ও দোকানপাট মেরামত করতে পারছে না এবং কোন গাছপালাও কাটতে পারছেন না। নতুন করে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলতে পারছেন না।

তারা জানায়, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের দুই দফায় নোটিশ দেয়। প্রথমে চার ধারা নোটিশ, দ্বিতীয় দফায় সাত ধারার নোটিশ দেয়া হয় এবং ৭ ধারার নোটিশ দিয়ে জমিসহ অবকাঠামোসমূহ একওয়ার করে বিআইডব্লিউটিএ। এরপর কোন নোটিশ দেয়া হয় নাই। পরবর্তীতে ৮ ধারা নোটিশ দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো সেটা পাই নাই। ৮ ধারার নোটিশে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। কিন্তুু আড়াই বছর পার হয়ে গেলো এখনো সেটা পাই নাই। দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে অপেক্ষা করে যাচ্ছি কিন্তুু ক্ষতিপূরণ কবে পাবো সেটা এখনো অনিশ্চিত। এ কারণে আমরা হতাশার মধ্যে আছি।

জমির মালিক আলিম মোল্লা বলেন, আমাদের প্রায় তিন বছর আগে একটা নোটিশ দেয়। আমাদের বাড়ী ঘর ভেঙে দেবে গাছপালা সহ। কিন্তুু এখন পর্যন্ত আমরা কোন ক্ষতিপূরণ পাই নাই। কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক বারে বলে ঈদের পরে করবো। নদী ভাঙছে। আমরা একটা বাড়ীঘর ভেঙে সরাতে পারছি না, গাছপালা কাটতে পারছি না, নতুন করে গাছপালা লাগানো এবং ঘরবাড়ি মেরামত করতেও পারছি না। অধিগ্রহণের মধ্যে আমার একটা বাড়ী আছে। বাড়ীঘরে থাকার মতো কোন পরিবেশ নাই, বৃষ্টি হলে পানি পড়ে অথচ মেরামতও করতে পারছি না।

ওহাব আলী শেখ নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে আমরা কঠিন সমস্যার মধ্যে আছি। বন্দর করার জন্য আমাদের জমি অধিগ্রহণ করছে বিআইডব্লিউটিএ। আমাদের বাড়ীঘর অবকাঠামো যা কিছু ছিলো তারা সিজার লিস্ট করছে। পর্যায়ক্রমে একাধিক নোটিশ দিছে আমাদের। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিলো। আমাদের কে বলা হয়েছে আপনাদের ঘর দরজা জমিসহ সমস্ত কিছু দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নদী বন্দর আধুনিকায়ন প্রকল্পটির জন্য ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। সরকারের পক্ষ আমাদের কে জানানো হয়। এখানে আপনারা নতুন কিছু করতে পারবেন না। আপনাদের যা কিছু আছে সেগুলোও নিতে পারবেন না। এখন আমাদের ঘরদরজা গুলো ভেঙে যাচ্ছে। আমরা মেরামত করতে পারছি না। একটা মুরগীর ফার্ম আছে। ফার্মের জন্য একটি ব্যাংকে ঋণের জন্য ঋণের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তুু ব্যাংক থেকে আমাকে বলেছে একাগজ গ্রহণ যোগ্য হবে না। তার মানে জমি অধিগ্রহণের আওতায় চলে গেছে। আমার ব্যবসা বাণিজ্য সব বন্ধ। এরকম শুধু আমি না, এরকম প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখান থেকে সরে গেছে এই দোকানপাট গুলো এখন বন্ধ। নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন এই এলাকার জনগণ। মানবতার জীবন যাপন করছে তারা।

প্রতিবন্ধী মোন্নাফ শেখ নামের ভুক্তভোগী বলেন, দৌলতদিয়া ঘাট আধুনিকায়ন নৌ বন্দর করার লক্ষে এখানে যে শতশত বাড়িঘর। তার মধ্যে আমি একজন অসহায় প্রতিবন্ধী। নৌ বন্দর করাতে অধিগ্রহণ করবে বাড়ীঘর। সেই মর্মে আমরা নোটিশ পেয়েছি। নোটিশে যে হিসাব আমাদের বাড়ীঘর হিসাব করে নিয়ে গেছে। এখন আমরা এই বাড়ীঘর মেরামত করতে পারছি না।

দৌলতদিয়া বাজার ব্যবসায়ি পরিষদের কোষাধ্যক্ষ ও ভুক্তভোগী, আব্দুস সালাম মোল্লা বলেন, নির্বাচনের আগে এখানে জনপ্রতিনিধিরা এসে ওয়াদা করে। নির্বাচন শেষ হলে আমরা একাজ করে দেবো। তবে নির্বাচন শেষ হলে আর জনপ্রতিনিধিদের কোন খোঁজখবর থাকে না। এ সমস্যার মধ্যে আমরা পড়ে আছি। আমাদের ঘরবাড়ি গুলো একাওর করে সরকার লিখে নিছে নোটিশ দিয়ে অথচ তারা এখনো কোন ক্ষতিপূরণ দেয় নাই। তারা যদি এখন না নেয় তাহলে আবার নোটিশ দিয়ে আমাদের ঘরবাড়ী গুলো ফেরত দেক। আমাদের ক্ষেত খামার আছে ফসল আছে। এখানে নতুন করে কিছুই করতে পারছি না আমরা। যে গাছপালা আছে সেগুলোও কাটতে পারি না। দীর্ঘসময়ের এ সমস্যা থেকে মুক্তি চায় স্থানীয় ভুক্তভোগী পদ্মা পাড়ের হাজারো মানুষ।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটকে আধুনিকায়নের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিলো বিআইডব্লিউটিএ। এখানে ভূমি অধিগ্রহণের যে বিষয়টা আছে তার জন্য একটি প্রস্তাব সংস্থাটি জেলা প্রশাসক বরাবর করে। আমাদের কাছে যতটুক তথ্য আছে প্রস্তাবও প্রস্তুত হয়েছিলো। এটা সরকারের উর্ধ্বতন মহলে গিয়েছে। এটা পাশ হলে এখানে যাদের জমি গুলো অধিগ্রহণ করা হবে তাদের টাকা পরিশোধ করার পরে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। এটা কোন প্রত্যাশী সংস্থা এখনো এই পরিমাণ কোন টাকা নিয়ে আসতে পারেন নাই। সুতরাং এটা পরিশোধ করেন নাই এ কারণে প্রকল্পটি এখনো বাস্তবায়নের হওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কতৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা জানান, আমাদের ইনিশিয়ালি এটা প্রায় ১৪০০ কোটি টাকার প্রজেক্ট ছিলো। কিন্তুু এখন নতুন করে আবার সমীক্ষার প্রয়োজন। সমীক্ষা করে দেখতে হবে টাকার অংক কি পরিমাণে দাড়াবে। কিছু ঘাট কে ছেড়ে দিয়ে এবং অর্থনৈতিক যে চাপ আছে সে অনুযায়ী বর্তমান সমীক্ষা অনুযায়ী খরচটা কমানো যায় কিনা সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ যখন হয়। জমি নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই তাদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকল্পটির প্রাথমিক পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া ছিলো। জমি অধিগ্রহণ একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হয়। আমরা সে প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। এটা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। এবং জমি নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com