দেশে যখন অশান্ত পরিবেশ বিরাজ করে তথন মানুষের জীবন ও সম্ভ্রম রক্ষা করা খুবই কঠিন । সেই মুহুর্তে একজন সংগ্রামী নারীর স্বীকৃতি জানার আগ্রহে কথা হয় বালিয়কান্দি উপজেলার বীরমুক্তিযোদ্ধা অঞ্জু রায়ে সাথে। তিনি জানালেন , আমাদের নওপাড়া গ্রামটি শিক্ষিত ও ধনী লোকের বসবাস। গ্রামের মধ্যে শচীন্দ্র নাথ সরকার ছিলেন দেশ দরদী সমাজ সেবক ও উদার প্রকৃতির লোক। তিনি আমার বাবা কুঞ্জ বিহারি রায়ের একমাত্র বন্ধু। তার কাছ থেকে রাজনৈতিক শিক্ষা দীক্ষা ও স্বাবলম্বী হওয়ার মন্ত্র শেখা। সেই মন্ত্র ধারন করে ছোট বেলা হতে কবিতা আবৃত্তি, নাচ, গান, ধর্মীয় শিক্ষা ও সেবামূলক কাজের প্রতি মনোযোগী হওয়া। অপরদিকে শিক্ষক সুরেন্দ্র নাথ ভদ্র মহাশয়ের স্নেহে শিক্ষা জীবনে এগিয়ে চলা। ১৯৭১ সাল। সবেমাত্র কুষ্টিয়া র্গালস কলেজের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশে মধ্যে বৈষম্যহীন জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দেয়। পারিবারিক শিক্ষা ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের সাথে একাট্টা হয়ে ভারতের শিকারপুর বর্ডার হয়ে নদীয়া জেলার কল্যানী ৬নং শিবিরে অবস্থান করি। ভারত সরকার প্রদত্ত খাবার খেয়ে মা-বাবাকে নিয়ে বেঁচে থাকি। রাজনৈতিক কারনে ৬নং কল্যানী ক্যাম্প শিবিরের শক্তির সাথে একত্রিত হই। যোগ দেই মুজিবনগর জয় বাংলা অ্যম্বুলেন্স দলে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করায় কর্তৃপ্ক্ষ আমাকে একটি আইডি কার্ড প্রদান করে । কাজ ছিল আহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা প্রদান করা। কাজে সন্তুষ্টি হয়ে অধিকতর সেবা প্রদানের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। আমার প্রশিক্ষণ সহযোগী ছিলেন রমেশ চন্দ্র সরকার। শুধু সেবাই নয়। কখনও সংগ্রামী কবিতাও গান গেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত করি। সেখানে শরনার্থীদের দ্বারা গঠিত সহায়ক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হই। বিভিন্ন আহত লোকদের নৈহাটি ও কল্যানী হাসপাতালে পৌছে দেয়া। সাধুখালীর সুকুমার বাবুর হাতে পচন ধরেছিল তাকে সেবা দেওয়ায় সে মনে রেখেছে।দেশ স্বাধীন হলে দেশে ফিরে নওপাড়া ভবতারিনী সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করে। শিক্ষকতায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের শ্রদ্ধা ভরে জাতীয় সঙ্গীত চর্চাই ছিল নিত্য দিনের কাজ। শিক্ষকতায় বড় অর্জন জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পুরষ্কার প্রাপ্তি। ১৯৮৪ সালে পিতার মৃত্যুর পর বৃদ্ধ মাতাকে নিয়ে বড় অসহায় হয়ে পড়ে। ১৯৮৬ সালে ফরিদপুর জেলার কামারখালী গ্রামে অমূল্যরতন বক্সির সাথে বিয়ে হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর আমাদের এক মাত্র সন্তান অস্তি বক্সি এলপি(এম এ) নিয়ে অবসর জীবনে এগিয়ে চলা। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দেওয়ায় ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভূক্ত করায় ভাতা ভোগ করছি। বালিয়াকান্দি উপজেলার একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে মুজিববর্ষে সুবর্ণ জয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মহিলা- শিশু মন্ত্রণালয় রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করে।
প্রকাশক : ফকীর আব্দুল জব্বার, সম্পাদক : ফকীর জাহিদুল ইসলাম, সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ ২২ নং ইয়াছিন স্কুল মার্কেট (২য় তলা), হাসপাতাল সড়ক, রাজবাড়ী সদর, রাজবাড়ী মোবাইল: 01866962662
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari