শফিকুল ইসলাম শামীম ॥
কৃত্রিম দুর্ভোগের অপর নাম দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট। দুর্ভোগ বিহীন এই নৌরুট পার হওয়া অসম্ভব। কৃত্তিম এই দুর্ভোগের সাথে যোগ হয় প্রাকৃতিক দুর্ভোগ। যোগ হয় ফেরি, পল্টুন, ঘাট ও নাব্যতা সংকট।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট অফিস সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট সচল থাকলে এবং ১৯/২০টি ছোট বড় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক থাকলে গড়ে ৪২ শত বিভিন্ন প্রকার যানবাহন দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরি পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে যায়। সেই হিসেবে পাটুরিয়া ঘাট থেকে ৪২শত বিভিন্ন প্রকার যানবাহন ফেরিতে নদী পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে আসে। তবে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য, উভয় ফেরি ঘাটের অব্যবস্থাপনা, নদীতে নাব্যতা সংকট থাকা, ঘাটের স্থায়ী টার্মিনাল ব্যবহার না করা, ট্রাফিক পুলিশ, বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সমন্বয় না থাকার কারণে উভয় ঘাটে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় চালক ও যাত্রীদের।
দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য ঃ
অনুসন্ধানে এবং একাধিক ট্রাক চালকের সাথে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যার পূর্ব থেকে দালাল চক্রের আনা-গুনা শুরু হয়। চলে শেষ রাত অবধি। এই দালাল চক্র বিভিন্ন পন্যবাহী ট্রাক চালকদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে অনৈতিক সুযোগ করে দেয়। পিছনের গাড়ী সামনের নেওয়ার ব্যবস্থা করে। পন্যবাহী ট্রাকগুলোর মধ্যে প্রকার ভেদ রয়েছে। মাছের গাড়ী, দেশী-বিদেশী ফলের গাড়ী, কাঁচা মালের গাড়ী ও অপচনশীল দ্রব্যবাহী গাড়ী দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত নদী পার হয়। এই গাড়ীগুলো নিয়ম ভেঙ্গে ফেরি পার করার জন্য ট্রাক মালিকদের রয়েছে নির্ধারিত দালাল গ্রুপ। টাকার বিনিময়ে তারা এসকল গাড়ী সামনে নিয়ে যায়। এতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ঘাটে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ও দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয় নদী পারের।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নাব্যতা সংকট ঃ
নদীতে পানি কমে গেছে। যে কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে রয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। ডুবোচর ও নাব্যতা সংকট থাকার কারণে প্রতিটি ফেরি অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে। ফেরিগুলো ঘাটে ভিরতে অনেক দুর ঘুরতে হচ্ছে। পল্টুন গুলো স্বাভাবিকের চেয়ে নিচু হয়ে গেছে। ফেরিতে যানবাহন উঠা-নামা করতে অনেক যানবাহন বিকল হয়ে যায়। এতে প্রতিটি ফেরি দ্বিগুন সময় ব্যয় হচ্ছে। তবে নদীর নাব্যতা সংকট মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুট নাব্যতা মোকাবিলা করার জন্য উভয় ঘাটে একাধিক ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং করা হচ্ছে।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ফেরি ঘাটে অব্যবস্থাপনা ঃ
ট্রাফিক পুলিশ, বিআইডøিউটিসি’র এবং বিআইডøিউটিএ কর্মরত কর্মকর্তাগন সার্বক্ষণিক দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া উভয় ফেরি ঘাটে উপস্থিত থাকে। দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট থেকে মহাসড়কের ৫/৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ কর্মরত অবস্থায় থাকে। এসকল অফিসারদের সার্বিক সহযোগিতায় দালাল চক্র অনিয়ম করে। এতেও যানজট বেড়ে যায়। বিআইডব্লিউটিসি’র কর্মরত অফিসারদের সহযোগিতায় পল্টুনে ফেরি রাখার অনেক পূর্বে যানবাহনগুলো পল্টুন ও সংযোগ সড়কে রাখে। এতে প্রতিটি ফেরি থেকে যানবাহন আনলোড করতে অনেক সময় ব্যয় হয়। বিআইডøিউটিএ কর্মরত অফিসাদের উদাসিনতার কারণে বিকল হওয়ার পূর্বে কোন কাজ করেন না।
ঘাটের স্থায়ী টার্মিনাল ব্যবহার হয় না ঃ
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডøিউটিএ) মালিকানাধীন দৌলতদিয়া ঘাটে দুইটি টার্মিনাল রয়েছে। তবে টার্মিনালগুলোতে যানবাহন না রেখে মহাসড়কে দীর্ঘসারি দিয়ে রাখতে দেখা যায়। এদিকে টার্মিনালগুলোতে অনেকে দখল করে ব্যবসা করছে।
লিয়াকত নামের এক তোরমুজ ব্যবসায়ী জানান, ফেরি বুকিং কাউন্টারে ১৪০ টাকা বেশি এবং চালাল চক্রের ৫শত টাকা না দিয়ে কোন ভাবেই বুকিং কাউন্টার থেকে টিকিট পাওয়া সম্বব নয়। সুতরাং বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ফেরির টিকিট সংগ্রহ করতে হয়।
রাশেদ বেপারী নামের এক ব্যক্তি বলেন, অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সব কিছু সহজ নিয়মে হয়। না দিলে অস্বাভাবিক ও অসহ্য ভোগান্তি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফেরি পার হতে হয়।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি সংকট নেই। তবে এই নৌরুটে বর্তমান অনেক অতিরিক্ত যানবাহন আসছে। যে কারণে গত কয়েকদিন যাবৎ ঘাটে কিছু যানবাহন ফেরি পারের অপেক্ষায় থাকে।
রাজবাড়ী ট্রাফিক পুলিশ ইন্সেফেক্টর (টিআই) তারক পাল জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে অতিরিক্ত যানবাহন আসছে প্রতিনিয়ত। যেকারণে যানবাহনের চাপ থাকে।
প্রকাশক : ফকীর আব্দুল জব্বার, সম্পাদক : ফকীর জাহিদুল ইসলাম, সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ ২২ নং ইয়াছিন স্কুল মার্কেট (২য় তলা), হাসপাতাল সড়ক, রাজবাড়ী সদর, রাজবাড়ী মোবাইল: 01866962662
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari