রাজবাড়ীর পাংশায় পরকীয়া প্রেমের টানে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বুধবার রাত ৯টার দিকে স্বামীর বাড়ি থেকে সকলের অগোচরে বেরিয়ে যান গৃহবধূ দীপা রানী পাল (২২)। পরকীয়া প্রেমিক সাগর বিশ্বাসসহ স্থানীয় কয়েক জনের হাতে পথে জিম্মি হয় দীপা রানী পাল। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে দীপা রানী পালকে স্বামীর বাড়িতে রেখে যায় জিম্মিকারীরা। ওই দিন সকাল ৯টার দিকে গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন দীপা রানী পাল। গৃহবধূ দীপা রানী পাল মৈশালা গ্রামের গ্রামের সিঙ্গাপুর প্রবাসী মিঠুন পালের স্ত্রী।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ৯টার দিকে কাউকে কিছু না বলে সকলের অগোচরে স্বামীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। পরে তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন। রাতে স্থানীয় সালাম নামের এক ব্যক্তি দীপা রানীর মুঠোফোনে ফোন দিয়ে তার স্বামীর কাছে মুক্তিপন দাবি করলে তিনি দিতে রাজি হননি। পরে ভোর ৫টার দিকে স্থানীয় মাসুদ, সাহাই ও সালাম দীপা রানীকে স্বামীর বাড়িতে দিয়ে আসেন। পরে দীপা রানী আত্মহত্যা করেন।
জানা যায়, প্রেমিক সাগর বিশ্বাস ও গৃহবধূ দীপা রানী পাল রাত ১০টার গাড়িতে ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পথে সালাম, শাহাই ও মাসুদ তাদের জিম্মি করে। রাত ১১টার দিকে কালুখালী উপজেলার এক নারীর বাসায় তাদের আটকে রাখা হয়। পরে দীপা রানীর স্বামী মিঠুন পালের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করে মুক্তিপণ দাবি করেন সালাম। এক পর্যায়ে সালামের মুঠোফোনে সাড়া না দিয়ে ফোনটি কেটে দেন মিঠুন পাল। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে তাদের ওই বাসা থেকে বের করা হয়। প্রায় আধাঘন্টা ওই বাসার সামনে দীপা রানী ও সাগর বিশ্বাসের সাথে সালাম, শাহাই, মাসুদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শাহাই সাগর বিশ্বাসকে মারপিট করে একটি অটোতে (ইজিবাইক) তুলে পাংশা নিয়ে আসে এবং মাসুদ ও সালাম দীপা রানীকে একটি মোটরসাইকেলে করে পাংশার উদ্দেশ্য রওনা হয়। শাহাই প্রেমিক সাগরকে নিয়ে পাংশা মৈশালা বাসস্ট্যান্ডে এলাকায় পৌছে সালাম, মাসুদ ও দীপা রানীর জন্য অপেক্ষা করে। প্রায় ৩ ঘন্টা তাদের জন্য অপেক্ষা করেন। এর মধ্যে দীপা রানীর কাছ থেকে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং ধারণা করা হয় এই সময়ের মধ্যে তাকে ধর্ষণ করা হয়। প্রায় তিন ঘন্টা অপেক্ষার পর ভোর সাড়ে ৪ টার পরে দীপা রানীকে নিয়ে মৈশালা লুলুর ফার্ম নামকস্থানে তিন রাস্তার মোড়ে আসেন মাসুদ ও সালাম। পরে সেখানে সাগর বিশ্বাস ও দীপা রানীর সাথে প্রায় আধাঘন্টা কথা বলেন সালাম, শাহাই ও মাসুদ। ভোর ৫ টার দিকে সাগর বিশ্বাস বাড়ি চলে যায়। পরে দীপা রানীকে তার স্বামীর বাড়িতে দিয়ে আসেন মাসুদ, শাহাই ও সালাম।
কালুখালী উপজেলার ওই নারী বলেন, সালাম নামের এক ব্যক্তি ওই ছেলে ও মেয়েকে আমার বাসায় নিয়ে আসে এবং রেখে যায়। আবার কিছুক্ষণ পরে এসে নিয়ে যায়। এর মধ্যে মেয়েটির সাথে কথা বলে জানতে পারি ছেলেটির সাথে মেয়েটির প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। মেয়েটির বোরখা পড়া ছিলো। মেয়েটি যে হিন্দু আমার জানা ছিলো না।
দীপা রানী পালের স্বামী মিঠুন বলেন, রাতে সালাম আমাকে ফোন করে বউ ফেরৎ দেওয়ার শর্তে মুক্তিপন দাবি করেন। আমি রাজি না হয়ে তার ফোন কেটে দেই। পরে ভোর ৫ টার পরে স্থানীয় সালাম, মাসুদ ও শাহাই আমার স্ত্রীকে বাড়ি দিয়ে যায়। বাড়ি আসার পর আমরা তার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলি। জানতে পরি সাগরের সাথে পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা আটক হয়। পরে আমার স্ত্রী ঘুমানোর কথা বলে ঘরের দরজা বন্ধ করে গলায় ওরনা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন।
এ বিষয়ে প্রেমিক সাগর বিশ্বাসের মা ফরিদা বেগম বলেন, মেয়েটি মরার আগে কিছুই জানতাম না। মারা যাওয়ার পর আমার ছেলের কাছ থেকে সুনেছি মিঠুনের স্ত্রীর সাথে আমার ছেলের প্রেমের সম্পার্ক ছিল। ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে মেয়েটি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পথে অজ্ঞাত স্থানে জামা-কাপড়ের ব্যগ রেখে কালুখালীতে গিয়ে আমার ছেলের জন্য অপেক্ষ করে। মেয়েটির ব্যাগ নিয়ে কালুখালী যাওয়ার পথে আমার ছেলেকে জিম্মি করে স্থানীয় মাসুদ, শাহাই ও সালাম। পরে মেয়েটির সাথে বিয়ে দেওয়ার কথা বলে কালুখালীতে গিয়ে ওই মেয়েকেও আটক করে। পরে আমার ছেলেকে মারপিট করে সবকিছু ছিনিয়ে নেয় তারা।
এ বিষয়ে দীপা রানী পালের বাবা শ্রী দুলাল চন্দ্র পাল বলেন, ওই দিন রাতে আমার মেয়ে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় বলে সংবাদ পাই। এখানে এসে মেয়ের মরদেহ দেখতে পাই। পরে জানতে পারি আমার মেয়ে আত্মহত্য করেছে। আমি এ বিষয়ে পাংশা মডেল থানায় একটি মামলা যায়ের করেছি। যাদের প্ররচণায় আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।
জানা যায়, প্রেমিক সাগর বিশ্বাস মৈশালা মৈত্রডাঙ্গী গ্রামের রমজানে বিশ্বাসের ছেলে। দীপাকে আটককারীরা একই গ্রামের ইমারত বিশ্বাসের ছেলে সালাম বিশ্বাস (২৬), চাঁদ আলীর ছেলে মো. মাসুদ (২২) ও জব্বার মন্ডলের ছেলে মো. শাহাদত বিশ্বাস অরফে শাহাই (২৫)। অভিযুক্ত কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পাংশা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, দীপা রানী পাল আত্মহত্যার ঘটনায় একটি এজাহার পেয়েছি। আসামীদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। দীপা রানীকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ময়না তদন্তের রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।
প্রকাশক : ফকীর আব্দুল জব্বার, সম্পাদক : ফকীর জাহিদুল ইসলাম, সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ ২২ নং ইয়াছিন স্কুল মার্কেট (২য় তলা), হাসপাতাল সড়ক, রাজবাড়ী সদর, রাজবাড়ী মোবাইল: 01866962662
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari