শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন

মুজিবনগর সরকারের বৈশিষ্ট্য ও বাস্তবতা-ডাঃ এস এ মালেক

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৩৬ Time View

মুজিবনগর সরকার বলতে আমরা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যখন দেখলো যে, বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তারকৃত এবং হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের ওপর আক্রমণ শুরু করেছে, একরাতে প্রায় ২৫ হাজার লোক মেরে ফেলেছে, এরকম একটা পরিস্থিতিতে পার্লামেন্টের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিলেন যে, দেশের বাইরে সরকার গঠন করে সেই সরকারের নেতৃত্বে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা ছাড়া তাদের আর অন্য কোনো উপায় নেই। অনেকে বলে থাকেন বিশেষ করে বিরোধী দল থেকে এবং স্বাধীনতাবিরোধী চক্র থেকে যে পার্লামেন্টের সদস্যরা সেদিন জনগণকে ছেড়ে নিজেদের জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কথাটা একেবারে অসত্য।

একবার ভেবে দেখুন তো যদি পার্লামেন্টের নির্বাচিত নিরস্ত্র সাংসদরা দেশের অভ্যন্তরে থাকতেন এবং পাকিস্তান সুযোগ পেত তাহলে প্রথমেই মেরে ফেলতো এই পার্লামেন্ট সদস্যদের। কেননা তাদের হত্যা করেই পাকিস্তান যে সামরিক সমাধান চেয়েছিল তা সম্ভব ছিল এবং পার্লামেন্টের সদস্যরা সুচিন্তিতভাবে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, একমাত্র পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারতই তাদের সহযোগিতা দিতে পারে। পূর্ব থেকে এরকম একটা অ্যারেঞ্জমেন্টও বঙ্গবন্ধু করে রেখেছিলেন। ফলে পার্লামেন্ট সদস্যরা তখন বর্ডার পার হয়ে ভারতে গিয়ে ভারতের সরকারেরঅনুমোদনক্রমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে(মেহেরপুরের মুজিবনগর আ¤্রকাননে) মাটিতে শপথ নিয়ে মুজিবনগর সরকার গঠন করেন। এই সরকারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে যদিও এই সরকার একটা বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু এই সরকারের যারা প্রতিনিধি ছিলেন, সরকার যারা গঠন করেছিলেন, তাদের সকলেই ছিলেন পূর্ব বাংলার নির্বাচিত প্রতিনিধি। বিশ্বে খুব কম ক্ষেত্রে দেখা যায় যে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একটা বিপ্লবী সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সুতরাং সেদিন যদি পার্লামেন্টের সদস্যরা না যেতেন তাহলে আমাদের যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা সংগ্রাম করেছিলাম, বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করেছিলেন সেটা বিফল হয়ে যেত এবং পাকিস্তান এককভাবে এই সমস্যার সমাধান করতো। কেননা নিরস্ত্র জনগণ কখনো ৯৩ হাজার সশস্ত্রপাকিস্তানি সৈন্য বাহিনীর সাথে মোকাবেলা করতে পারতো না এবং কিছু সময় উত্তীর্ণ হলে এটা বোঝা যেত। জিয়াউর রহমান কে বলা হয়বিশেষ করে বিএনপি বলেন যে, তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। আসলে প্রকৃত অর্থে তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে নেতৃবৃন্দের দ্বারা নির্দেশিত হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। তার স্বাধীনতা ঘোষণা করার কোন অধিকার ছিলনা। তাকেও তো এই বর্ডার ক্রস করে মুজিবনগর সরকারের অধীনেই চাকরি নিতে হয়েছিল। সুতরাং এটাই প্রমাণ করে যে, বিরোধী দল থেকে যা বলা হয় আওয়ামী লীগ সেদিন জনগণকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল নিজেদের স্বার্থপরতাবশত একথা ঠিক নয়। আওয়ামী লীগ সেদিন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলেই মাত্র নয় মাস যুদ্ধ করে ভারতের সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আমরা সেদিন স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হই। এই মুজিবনগর সরকারের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই সরকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অথচ একটা বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন সুতরাং তাকে একটা গণতান্ত্রিক বিপ্লবী সরকার বলা যেতে পারে এবং সেটা বলাই ঠিক হবে। কেননা সবকিছুই করা হয়েছে গণতান্ত্রিক ভাবে।পাকিস্তান ক্ষমতা হস্তান্তর না করায় সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করতে হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে বাংলার মানুষকে যে আহ্বান জানিয়েছিলেন বাংলার মানুষ তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, বঙ্গবন্ধুর দলীয় নেতৃবৃন্দ এবং অন্যান্য যারা স্বাধীনতার স্বপক্ষে ছিল তারা সম্মিলিতভাবে এ দেশ স্বাধীন করেছে। সুতরাং মুজিবনগর সরকার একটা গণতান্ত্রিক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এই সরকার ছিল একান্তভাবে অপরিহার্য। সেই সিদ্ধান্তই আওয়ামী লীগ নিয়েছিল। আজকে যারা এই কথা বলে সরকারের সমালোচনা করেছে তারা ইতিহাসকে বিকৃত করছে এবং যা বলছে সেটা সত্যের অপলাপ মাত্র।
লেখক : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com