এক বিঘা জমিতে ২শত মণের অধিক পেঁয়াজ। অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন কৃষক লাবলু। লাবলু রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার মইজদ্দিন মোল্লা পাড়ার একজন প্রান্তিক কৃষক। লাবলু’র আবাদি পেঁয়াজ দেখতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শতশত কৃষক আসছে এবং পরামর্শ নিচ্ছে। সাধারণত দুই প্রকার পেঁয়াজ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। মনকাঁটা পেঁয়াজ ও হালি পেঁয়াজ। রাজবাড়ী জেলার কৃষকের প্রধান আবাদ এই দুই প্রকার পেঁয়াজ। রাজবাড়ী জেলার একাধিক পেঁয়াজ চাষী ও রাজবাড়ী কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, পেঁয়াজের ভাল যন্ত্র নিলে মনকাঁটা ও হালি পেঁয়াজ এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ৬০/৬৫ মণ হয়। পেঁয়াজের আকারও ছোট। তবে পেঁয়াজ খুব সুস্বাদু হয়। কিন্ত ২শত মণ পেঁয়াজ এক বিঘা জমিতে হয় এটা অসম্ভব। এই অসম্ভব কে সম্ভব করেছে পেঁয়াজ চাষী লাবলু।
লাবলু বলেন, আমরা কৃষি পরিবার। বাপ-দাদা কৃষক ছিল। সেই সুবাদে আমিও একজন কৃষক। ধান-পাট, ছোলা, গম, মসুরী, ভুট্টার পাশাপাশি প্রতি বছর ১০/১২ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ-রসুন আবাদ করি। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ভাল হলে এক বিঘা জমিতে ৬০ মণ পেঁয়াজ হয়। সেই হিসেবে প্রতিবছর লোকসান গুনতে হতো পেঁয়াজ আবাদে। কিন্ত এবার “ইউনাইটেড সীড” কোম্পানীর পরামর্শে ২বিঘা জমিতে “হাইব্রিড পেঁয়াজ” রঙ্গিলা-৭ পেঁয়াজ আবাদ করি। তিনি বলেন, এই পেঁয়াজ আবাদ করার পূর্বে অনেকে ভয় দেখিয়েছে। কিন্ত আমি “ইউনাইটেড সীড” কোম্পানীর পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে চাষ করি এবং তাদের দিক নির্দেশনায় পরিযর্চা করি। কিন্ত এখন দেখা যাচ্ছে এক বিঘা জমিতে ২শত মণের অধিক পেঁয়াজ হচ্ছে। এলাকার শতশত কৃষক আমার এই পেঁয়াজ দেখতে আসছে এবং পরামর্শ চাচ্ছে।
এসময় কৃষক রেজাউল মুন্সি বলেন, “ইউনাইটেড সীড” কোম্পানীর পরামর্শ পেয়েছি তবে বিশ্বাস করি নাই। কারণ আমাদের দেশের পেঁয়াজ যত ভাল হোক ৬০ মণের বেশি হয় না। সেখানে কিভাবে ২শ মণ পেঁয়াজ হবে। এখন লাবলু পেঁয়াজ দেখে বিশ্বাস হয়েছে। এই পেঁয়াজ দেখতে এসেছি এবং পরামর্শ চাচ্ছি আগামী মৌসুমে “ইউনাইটেড সীড” কোম্পানীর কাছ থেকে উন্নতমানের পেঁয়াজের বীজ নিয়ে চাষ করবো।
“ইউনাইটেড সীড” কোম্পানীর ফিল্ড প্রোমোর্টর এন্ড এরিয়া ম্যানেজার মো. আমজাদ হোসেন জানান, “ইউনাইটেড সীড” কোম্পানীর একটি জনপ্রিয় কোম্পানী। কৃষকের কল্যানে একটি নিশ্চিত ফসলের কোম্পানী। ইউনাইডেট সীড দীর্ঘ কয়েক বছর গবেষণার পর হাইব্রিড পেঁয়াজ রঙ্গিলা-৭ গত বছর থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন মাঠ পর্যায়ে ফ্রি সেম্পল এবং কিছু বিক্রি করা হয়। তিনি বলেন, অতিরিক্ত সচিব আব্দুল্লা সাজ্জাত ও বীজ অনুবিভাগের মহাপরিচালক নিজে মাঠ পরিদর্শন করেছেন। তারা দেখে অনুমান করেছেন প্রতি বিঘা জমিতে ১৮০/২০০ মণ পেঁয়াজ হবে। এবং প্রান্তিক কৃষকদের নিয়ে মাঠ দিবস করেছেন। অনেক কৃষক এই পেঁয়াজ দেখতে আসছে এবং বলছে ৪০/৫০ বছরের জীবনে এমন পেঁয়াজ কখনও দেখা হয়নি। তিনি বলেন, একই জমি, একই খবর কিন্ত ফলন বেশি হওয়ায় অনেক কৃষক আগ্রহ হচ্ছে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ উপপরিচালক এসএম সহীদ নূর আকবর জানান, বাংলাদেশের মনকাঁটা ও হালি পেঁয়াজ সাধারণত ৩৩শতাংশ অথবা এক বিঘা জমিতে ৬০/৬৫ মণ হয়। অনেক সময় বিভিন্ন কারণে এর চেয়ে কম হয়। কিন্ত বিভিন্ন বীজ কোম্পনী গবেষণা করে প্রতিনিয়ত উন্নতমানের বীজ দিচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় “ইউনাইটেড সীড” কোম্পানী একটি বীজ দিচ্ছে। সেই বীজ থেকে ২শতাধিক মণ এর অধিক বীজ হচ্ছে। পেঁয়াজের আকারও অনেক বড়। দেখতেও অনেক সুন্দর। দেশী হালি পেঁয়াজের স্বাদ পাওয়া যায়। অনেক কৃষক “ইউনাইটেড সীড” কোম্পানীর বীজের পেঁয়াজ আবাদ করতে আগ্রহী হচ্ছে।
প্রকাশক : ফকীর আব্দুল জব্বার, সম্পাদক : ফকীর জাহিদুল ইসলাম, সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ ২২ নং ইয়াছিন স্কুল মার্কেট (২য় তলা), হাসপাতাল সড়ক, রাজবাড়ী সদর, রাজবাড়ী মোবাইল: 01866962662
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari