রাজবাড়ীতে আশঙ্কাজনক হারে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। ফলে জেলার সদর, পাংশা, কালুখালি ও বালিয়াকান্দি উপজেলার অধিকাংশ টিউবয়েলে বন্ধ হয়ে গেছে পানি ওঠা। সুপেয় পানি সংকটের কারণে একদিকে রান্না ও গৃহস্থলী কাজে যেমন সমস্যা হচ্ছে, তেমনি গৃহপালিত পশু-পাখির জন্যও মিলছে না পর্যাপ্ত পানি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচে পানির স্তর চলে যাওয়ায় অনেক টিউবয়েলে পানি উঠছে না। বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই টিউবয়েল থেকে পানি উঠছে না। কিছু টিউবয়েল থেকে পানি উঠলেও তা পর্যাপ্ত না। সুপেয় পানির জন্য এলাকাবাসী এক পাড়া থেকে অন্য পাড়াতেও যাচ্ছে। সামর্থবান অনেক পরিবার জলমোটর বসিয়েছে সংকট উত্তরণের চেষ্টা করছেন। তবে জলমোটরেও দিনের বেলা পানি ওঠছে না। পুকুর খালবিলে পানি না থাকায় আরও বেশি সংকট তৈরি হয়েছে। পানির অভাবে গবাদিপশু লালন পালন ও পরিবারের রান্না গোসলসহ অন্যান্য প্রয়োজনে পরিমাণ মতো পানি পাচ্ছে না। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।
কালুখালী উপজেলার গান্ধিমারা এলাকার বাসিন্দা আছিয়া বেগম বলেন, দুইমাস হলো টিউবয়েল থেকে পানি ওঠে না। পানির যদি পিপাসা লাগে পাড়া থেকে পানি এনে তারপর খেতে হয়। এমন দশা হইছে দুপুরে গোসল করে যোহরের নামাজ পড়বো পানি উঠাতেই সময় চলে যায়। এমনও দিন আছে যোহরের নামাজ পড়াই হয় না। পানির খুবই কষ্ট। পানি ওঠেই না। চেপে চেপেও পানি উঠানো যায় না। এই পাড়া ওই পাড়া থেকে পানি আনতে হয়। গরু বাছুর নিয়ে খুবই কষ্ট আমাদের।
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা সুলেমান শেখ বলেন, টিউবয়েল চেপে চেপে গা ঘেমে গেলেও পানি উঠে না। মেলা দূর এক বাড়িতে পানি উঠে সেই বাড়ি থেকে পানি এনে খেতে হয়। গরু ছাগল নিয়ে আরও কষ্টে আছি। এই কষ্টের শেষ নেই। গ্রামের প্রতিটি টিউবয়েরের একই অবস্থা।
পাংশা উপজেলার সরিষা গ্রামের পলাশ হোসেন বলেন, টিউবয়েল থেকে এক বালতি পানি উঠাতে গেলে কম পক্ষে কতটি চাপ দিতে হয় সেটা জানি না। পানি না উঠার কারণে গোসল করতেও পানি না শান্তি মত। এভাবে কত দিন চলবে জানি না। মাস খানেক আগে একটু উঠলেও এখন তাও উঠতে চায় না।
একই উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের আনিছুর রহমান বলেন, আমাদের বাড়ির টিউবয়েল থেকে পানি উঠা বন্ধ হয়েছে আরও এক মাস আগে। বাড়ি থেকে দশ বাড়ি পরে একটি টিউবয়েল থেকে পানি নিয়ে এসে খাওয়াসহ রান্নার কাজে ব্যবহার করে। আমরা ছেলেরা না হয় দূরে গিয়ে পুকুর অথবা নদী থেকে গোসল দিয়ে আছি কিন্তু বাড়ির মেয়েদের অবস্থাতো আরও খারাপ।
সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের বাসিন্দা খাইনুল ইসলাম বলেন, কলে পানি ওঠে না বলে মটর বসাইছি। এখন দেখি দিনে মটরদিয়ে পানি উঠে না। রাত দশটা এগারোটার দিকে মটর ছেড়ে পানি বালতি, ড্রামে ভরে রাখি সারাদিনের জন্য। এই হলো পানির অবস্থা।
রাজবাড়ীর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু জাকারিয়া বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ীতে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ ফুট। যে কারণে হস্তচালিত টিউবয়েলে পানি উঠছে না। আমরা জনগণকে উৎসাহ দিচ্ছি আমাদের যে সরকারি টিউবয়েল আছে সেখান থেকে পানি সংগ্রহের জন্য। আর জেলায় যে পানির সংসট তৈরি হয়েচে সেটা বৃষ্টি হলেই স্বাভাবিকে চলে আসবে।