
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, গত ১৬ বছর বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আপসহীন সংগ্রাম হয়েছে। সেটি ছিল মানুষের বাক স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, মুক্তকন্ঠে কথা বলার স্বাধীনতা, মিছিল করার স্বাধীনতা, সভা সমাবেশ করার স্বাধীনতা, যেটি সংবিধানে আছে। সেই স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য আমরা লড়াই করেছি। বিএনপির চেয়ারপার্সনকে যখন বন্দী করা হলো। তার উন্নত চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়া হলো। সেই মুহূর্তে দলের হাল ধরলো তারেক রহমান। তারেক রহমান গোটা জাতিকে ভার্চুয়ালি ঐক্যবদ্ধ করে ছাত্র জনতার আন্দোলনকে বেগবান করেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামে জন্মান্ধ আব্দুল গফুর মল্লিককে তার নিজ বাড়িতে আর্থিক সহায়তা প্রদানের সময় এসব কথা বলেন তিনি। এসময় আব্দুল গফুর মল্লিকের হাতে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা তুলে দেন রুহুল কবির রিজভী। আব্দুল গফুর মল্লিক চোখে দেখেন না। কিন্ত তিনি কর্মকরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এই বিষটি তারেক রহমানের দৃষ্টিতে আসে। তিনিই তার পাশে দাড়িয়েছেন। তার সহযোগিতা আমরা দিতে এসেছি। তাকে ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর পক্ষ থেকে সহযোগীতা করতে এসেছি।
কর্মসূচি শেষে রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশ বর্তমানে এক ভিন্নরকম পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে অতিক্রান্ত হচ্ছে। একটি পরিস্থিতি গেছে সেটা হলো ফ্যাসিবাদি আমল, গুম খুনের আমল, বিরোধী দলের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেওয়ার আমল। বিরোধীদল যাতে গলা জোড়ালোভাবে কথা বলতে না পারে সেই আমল। মানুষ ফিসফিস করে কথা বলেছে। একটা গ্রামে একটা এলাকায় কত রাজনৈতিক দল থাকতে পারে। একটি রাজনৈতিক দলের ভয়ে কেউ জোড়ে কোন কথা বলতে পারেনি। একটি বিপদ সংকুল ভয়াবহ ভয় আর আতঙ্কের পরিবেশ ছিল সেই আমল। সেটি শেখ হাসিনার আমল। সেটি আওয়ামী লীগের আমল। সেটি চৌদ্দদলীয় জোটের আমল। সেখানে কারও কোন কথা বলার অধিকার ছিল না।
তিনি আরও বলেন শেখ হাসিনার আমলের চাইতে হয়তো এখন কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করছি। কিন্তু সামগ্রিকভাবে স্বাধীনতার ভোগ করার বিষয়টি হচ্ছে আগামি নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ হবে কি না, কোন কারিগরি হবে কি না, কোন ইঞ্জিনিয়ারিং হবে কি না, এই কথাগুলোতো আসছে। আজকে জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ স্বাক্ষরিত হলো। যখন স্বাক্ষর করেছে সব রাজনৈতিক দল। ঐক্যমত কমিশনে যারা দায়িত্বে আছেন তারা যখন স্বাক্ষরিত সেই কাগজটি চুড়ান্তভাবে জমা দিলেন, তখন দেখা গেলে বিএনপি যেটাতে স্বাক্ষর করেছে সেই পাতা নেই। অন্যপাতা যুক্ত হয়েছে। এটা দুঃখজনক কথা। ড. ইউনুস সাহেবকে সবাই সম্মান করে। তিনি একজন গুণীজন। তার নেতেৃত্বে এই সরকার। তাকে তো বিএনপিসহ আন্দোলকারী সকল রাজনৈতিক দল সমর্থন দিয়েছিল। তার গঠন করা বিভিন্ন কমিশনের মাঝখান থেকে এই ধরণের প্রতারণামূলক কাজ হচ্ছে এইটা খুবই দুঃখ্যজনক কথা।
রিজভী বলেন, এখন সংবিধানে একক্ষবিশিষ্ঠ পার্লামেন্ট চালু আছে। এখন দ্বিকক্ষবিশিষ্ঠ সংসদ চালু করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে অথবা বাতিল করতে হবে। যে প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে তো সংবিধান বাতিল করতে হবে। তাহলে সংবিধান নতুন করে করবেন। স্বাধীনতার পর যে সংবিধান রচিত হয়, জনগণ ও সমাজের তাগিত অনুযায়ী সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ি সেটি সংশোধিত হতে হতে যায়। এটি সকল গণতান্ত্রিক দেশের নিয়ম। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা, জনমতে প্রতিফলন নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান সংশোধন হতে পারে। কিন্তু জুলাই সনদের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে ২৭০ দিনের মধ্যে যদি পার্লামেন্ট পাশ না করে তাহলে তা অটো পাশ ধরে নেওয়া হবে। একদলীয়, একতান্ত্রিক, কর্তৃত্ববাদী কোন দেশ ছাড়া পৃথিবীর কোন গণতান্ত্রিক দেশে এটা সম্ভব না।
সত্যিকার গণতন্ত্রের জন্য আবু সাঈদ, ওয়াসীম, মুগ্ধরা জীবন দিলো। তার ঐকমত্য কমিশন জনগণের সঙ্গে এই ধরণের প্রতারণা হয় কি করে। আমরা নিরাশাবাদী নয়, আমরা হতাশাবাদী নয়। আমরা আশা রাখতে চাই। স্বাধীনতার পর থেকে যেভাবে সংবিধান সংশোধন হয়েছে সেই ভাবে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।
সংবিধানে হয়তো অনেক কিছু সংশোধন হতে পারে। পৃথিবীর সকল গণতান্ত্রিক দেশে সংবিধান সংশোধিত হতে হতে জনগণের স্বার্থকে যেভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় সেভাবে সংশোধিত হয়তো হতেই পারে। তার জন্য সংবিধান বাতিলের প্রয়োজন নেই। সংবিধানের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক শূন্যতা বা ঘাটতি আছে সেটি একটি সনদ করে পার্লাামেন্টর মাধ্যমে সংবিধানে সংযোজিত হতে পারে। আমরা যদি সেভাবে না চলি তাহলে একটি সুগঠিত রাষ্ট্র আমরা গড়তে পারবো না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ স্বাক্ষরিত হয়েছে। যখন স্বাক্ষর করেছে সব রাজনৈতিক দল। ঐকমত্য কমিশনে যারা দায়িত্বে আছেন তারা যখন স্বাক্ষরিত সেই কাগজটি চুড়ান্তভাবে জমা দিলেন, তখন দেখা গেল বিএনপি যেটাতে স্বাক্ষর করেছে সেই পাতাটা নেই। অন্যপাতা যুক্ত হয়েছে। এটা দুঃখজনক কথা। ড. ইউনুস সাহেবকে সবাই সম্মান করে। তার গঠন করা বিভিন্ন কমিশনের দ্বারা এমন প্রতারণামূলক কাজ হবে তা মানুষ বিশ্বাস করে না।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ এর আহবায়ক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব মোকছেদুল মোমিন, রাজবাড়ী জেলা বিএনপির আহবায়ক অ্যাড. লিয়াকত আলী বাবু, যুগ্ম আহবায়ক অ্যাড. মো. আসলাম মিয়া, সদস্য সচিব কামরুল আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেদ পাভেলসহ বিএনপি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।