আজুগড়া বটতলা থেকে মহাশ্মশান পর্যন্ত রাস্তাটি মেটে। বৃষ্টির দিনে রাস্তাটি পরিণত হয় নেতি কাদার স্তুপে। শুস্ক মৌসুমেও হয়ে ওঠে ধুলাবালিরর আখড়া। সম্পূর্ণ রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় সোয়া ১ কিলোমিটার। পুরো রাস্তাটি জুড়েই রয়েছে একই পরিবেশ। এই রাস্তাটিই একটি গ্রামের প্রায় ৬৭টি পরিবারের মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা। বহু বছর ধরেই এই অসুবিধায় ভুগছেন গ্রামবাসী। দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান তারা।
এমন চিত্রই দেখা গেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আজুগড়ায় অবস্থিত আজুগড়া বটতলা থেকে আজুগড়া পশ্চিম পাড়া মহাশ্মশান পর্যন্ত রাস্তাটির। দীর্ঘ কয়েকদশক ধরে এ গ্রামে বসবাস করছে প্রায় সাড়ে ৩শ মানুষ। বৃষ্টির মৌসুম এলেই রাস্তাটি কাদা হয়ে আর চলাচলের উপযোগী থাকে না। কাদাযুক্ত আক্রান্ত এ রাস্তাটির চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় জন প্রতিনিধি, গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গের পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছেও এবিষয়ে জানানো হয়। দাবি করা হয় একটি পাকা রাস্তার। তবে শত চেষ্টা করেও আজও সরকারের নজর পরেনি চন্দনী ইউনিয়নের আজুগড়া গ্রামের এই রাস্তাটি উপর। এমনটাই দাবি গ্রামবাসীর।
গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে ঘরের মধ্যেই ভুগছেন তিনি। এই রাস্তাটুকু পেরিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার মতো কোনো উপায় নেই অসুস্থ ব্যাক্তিদের। কোনো বাহনও যায় না এই রাস্তার কাদা মারিয়ে। রাস্তাটির মাথায়ই রয়েছে একটি শ্মশান। গ্রামের কেউ মারা গেলে এই কাদা পেরিয়ে তাকে দাহ করতেও যাওয়াও যেন আরেক যন্ত্রণাময় কাজ।
এই রাস্তাটির মাথায় ইট বিছানো রাস্তায় রয়েছে আজুগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিদিন বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ এই গ্রাম থেকে কাদার মধ্যে দিয়ে বিদ্যালয়ে আসছে লেখাপড়া করতে। অনেকেই পা পিছলিয়ে পরে গিয়ে কাদামাখা হয়ে ফিরছে বাড়িতে। এই কাদা পেরিয়ে অনেক শিক্ষার্থীই রোগে আক্রান্ত হয়ে আসতে পারছে না বিদ্যালয়ে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চন্দনী বাসস্টান্ড থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত আজুগড়া বটতলা মোড়। সেখান থেকে আজুগড়া পশ্চিম পাড়ায় যেতে একমাত্র রাস্তাটির বেহাল অবস্থা। কাদাযুক্ত মেটে রাস্তাটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে রয়েছে। বাধ্য হয়ে হাটু পর্যন্ত কাদা মেখে বাড়ি থেকে বের হতে হয় গ্রামের বাসিন্দাদের। গ্রামে উৎপাদন করা ফসল অর্থকরী ফসল পাট জাগ দিতে নিতে হচ্ছে কিছুটা দূরে। সেখানে কাদা মারিয়ে নিয়ে আসতে ব্যবহার করতে হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। যা কৃষকের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এতে রাস্তার ক্ষতির মাত্রাও বাড়ছে।
গ্রামের শিক্ষার্থী ও রাজবাড়ী রেডক্রিসেন্ট ইউনিটের যুব প্রধান উজ্জ্বল কুমার দাস বলেন, আমি প্রতিদিন ইউনিটে যাই, ইউনিফর্ম পরে কাদাযুক্ত রাস্তায় যেতে গিয়ে অনেক সময় পোশাকে কাদা লেগে যায়। ঠিক তেমনি এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও এই রাস্তা পেরিয়ে নিয়মিত ক্লাসে যেতে পারে না। আমরা এলাকাবাসীরা বিগত সময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে বিষয়টি বারংবার অবগত করেছি। তবে আজও পর্যন্ত কেউ এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেন নি।
আজুগড়া পশ্চিম পাড়া বাসীন্দা সুধীর কুমার সরকার বলেন, আমরা বেশ কয়েক বছর যাবত এই রাস্তা নিয়ে খুব অসুবিধায় আছি। আমরা অনেকের কাছেই বলেছি। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ রাস্তাটা করা হচ্ছে না। আমরা খুবই দুর্ভোগের ভিতরে আছি। ভেতরে কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া যায় না, বাচ্চাদের স্কুলে আসতেও অসুবিধা হয়। গরু ছাগলের খাবারের বস্তা নেওয়া যায় না। প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র কিনে এনে একটা দোকানে রাখা হয়, পরে ফসল নেওয়ার জন্য মাঝে মাঝে ঘোড়ার গাড়ি এলে সেই গাড়িতে করে বস্তা বাড়িতে পৌছাতে হয়। রাস্তার এই অবস্থার কারণে ফসলের পাশাপাশি দৈনন্দিন সবজিগুলোও নিয়মিত বাজারে নেওয়া সম্ভব হয় না। তুলে নিয়ে বিক্রি করতে না পারায় প্রায় প্রতিদিনই পচে যায় সে সকল সবজিগুলো।
গ্রামের বাসিন্দা ও পশু চিকিৎসক সবুজ সরকার বলেন, বৃষ্টির মৌসুম এলেই রাস্তাটি কাদার স্তুপে পরিণত হয়। আমি নিজ গ্রাম সহ আশেপাশের কয়েকটি এলাকার পশু চিকিৎসা করি। দিন-রাত যে কোনো সময়ে গৃহপালিত পশুর যে কোনো সমস্যায় আমাকে ডাকলে যেতে হয়। তবে আমার বাড়ি থেকে পাকা রাস্তায় উঠতে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা এমন কাদাযুক্ত। যার ফলে দ্রুত সেবা তো দূরের কথা, কখনো কখনো সেবা দিতেও ব্যর্থ হই। আমার মোটরসাইকেলটি প্রায় কয়েকমাস বাড়িতে নিতে পারি না। প্রতিবছরই বৃষ্টির মৌসুমে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। পাকা রাস্তার পাশে এক আত্মীয়ের বাড়িতে মোটরসাইকেল রেখে জুতা হাতে নিয়ে কাদার মধ্য দিয়ে বাড়িতে যাই-আসি প্রতিদিন।
আজুগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। তবে তাদের মধ্যে একটি অংশ আসে আজুগড়া পশ্চিম পাড়া থেকে। বৃষ্টির সময়ে রাস্তার বেহাল অবস্থা হওয়ায় ওই এলাকার শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই কম থাকে। প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে ক্লাসে। অনেকেই আসলেও কাদামাখা অবস্থায় এসে আবার অসুস্থ হয়ে পরে। আবার ছুটি কাটাতে শুরু করে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবত রাস্তাটির জন্য চেষ্টা করছি। রাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও জমা দেওয়া হয়েছিল। গত বছরে কর্তৃপক্ষ এসে রাস্তাটির মাপঝোঁক করেও গেছেন। শুনেছিলাম টেন্ডার হয়ে এলেই রাস্তাটির কাজ শুরু হবে। তবে তারপরে দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হয়ে যাওয়ার পর আর এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ এখনো দেখা যায় নি। রাস্তাটি বেহাল অবস্থায় রয়েছে দীর্ঘদিন। তাই এটা সংস্কার হওয়া খুবই জরুরি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও চন্দনী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মো. তছলিম আরিফ বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে জানতে পেরেছি দীর্ঘদিন যাবত আজুগড়ার এই রাস্তাটির বেহাল দশা হয়ে রয়েছে। তা বর্তমানে চলাচলের অযোগ্য হয়ে রয়েছে। আগামী বাজেটে যাতে আমরা রাস্তাটি সংস্কারের ব্যবস্থা নিতে পারি, সে বিষয়টি আমরা সর্বাত্মক চেষ্টায় করবো।’
প্রকাশক : ফকীর আব্দুল জব্বার, সম্পাদক : ফকীর জাহিদুল ইসলাম, সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ ২২ নং ইয়াছিন স্কুল মার্কেট (২য় তলা), হাসপাতাল সড়ক, রাজবাড়ী সদর, রাজবাড়ী মোবাইল: 01866962662
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari