রাজবাড়ীতে জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিরোধের জেরে এক বৃদ্ধাকে বেধরক মারধরের অভিযোগ উঠেছে তার প্রতিবেশী বিরুদ্ধে। পরে উল্টো ওই বৃদ্ধার ছেলে ও মেয়ের নামে পাল্টা মামলা করেন প্রতিপক্ষ। যা থানায় গ্রহণ করায় ভুক্তভোগী পরিবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা।
মারধরের শিকার বৃদ্ধা মোছা. আছিয়া বেগম (৭৩)। গত ৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের আড়াবাড়ীয়া গ্রামেবে ঘটনাটি ঘটে। আহত আছিয়া বেগম ওই গ্রামের মৃত মোমিন ভূইয়ার স্ত্রী। অপরদিকে ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে একই গ্রামের বাসিন্দা মোছা. জহুরা বেগম (৩৬), জহুরার ছেলে সিফাত ভূইয়া (১৯) ও মেয়ে নূসরাত ভূইয়ার (২১) বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী আছিয়া বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী জহুরা বেগমের পরিবারের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। ওইদিন সকালে ওরা আমার ঘরে ঢুকে লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাথারি মারধর করে। মাথা, মুখ ও চোখে আঘাত পাই, রক্তও ঝরে পড়ে। আমি চিৎকার করলে আশেপাশের মানুষ এসে আমাকে বাঁচায়। হামলার সময় ওরা হুমকি দেয়, মামলা করলে আমাদের সবাইকে মেরে লাশ গুম করে ফেলবে এবং জমি দখল করবে। পরে স্থানীয়রা আমাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
আছিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, “আমি আদালতে মামলা করেছি, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় যারা আমাকে মেরেছে, তারাই উল্টো আমার ছেলে আশরাফুল ও মেয়ে মাজেদার নামে থানায় মামলা দিয়েছে। অথচ আমার ছেলে সেদিন রেলে কর্মস্থলে ছিল এবং মেয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণে ছিল। তবুও পুলিশ মামলা নিয়েছে। এখন আমাদের ডেকে হয়রানি করছে।” তিনি আরও জানান, তারা ন্যায়বিচার চাইতে গিয়ে এখন প্রতিদিন পুলিশের ভয়ভীতির মুখে আছেন। হামলাকারীরা দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
আড়াবাড়ীয়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সেদিন সকালে আছিয়া বেগমের চিৎকার শুনে গিয়ে তারা দেখেন তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছেন। তারা গিয়ে হামলাকারীদের তাড়িয়ে দিয়ে তাকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠান।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ইনচার্জ) শামীম আহমেদ বলেন, ঘটনার দিন আশরাফুল কর্মস্থলে ছিলেন, সে কারণে এ বিষয়ে আমরা প্রত্যয়নও দিয়েছি। রাজবাড়ী জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজমীর হোসেন বলেন, “মাজেদা সেদিন আমাদের কার্যালয়ে উপস্থিত থেকে বিউটিফিকেশন প্রশিক্ষণের পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তাই আমরা তার উপস্থিতির প্রত্যয়ন দিয়েছি।
আহত আছিয়া বেগম রাজবাড়ীর বিজ্ঞ সদর আমলি আদালত ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন, যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
অভিযুক্ত মোছা. জহুরা বেগম বলেন, তারা আমাদের নিকট আত্মীয় হওয়ায় তাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। মো. আশরাফুল ভূইয়া আমাকে কুপ্রস্তাব দেয়। তা আমি আমার পরিবারকে জানালে আশরাফুল ভূইয়া ক্ষুব্ধ হয়ে আমাকেসহ আমার ছেলে ও মেয়েকে মারধর করে। এতে আমার বাম হাতের হাড় ভেঙে গুরুতর আহত হই। স্থানীয়রা এগিয়ে এলে আমাকে ও আমার পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়। তারা যে অভিযোগ দিচ্ছে তা সঠিক নয়।
রাজবাড়ী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান জানান, মামলা রেকর্ড হওয়ার পর তদন্ত চলছে। যদি কেউ দোষী প্রমাণিত হয়, তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হবে। আর কেউ নির্দোষ হলে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।