গোয়ালন্দ উপজেলার এক সময়ের ব্যস্ততম নৌরুট পদ্মা এখন মরা পদ্মা হয়ে গেছে। অপেক্ষাকৃত ছোট ব্রিজ নির্মাণ করায় কচুরিপানা ও পানির অভাবে মরতে বসেছে গোয়ালন্দ বাজার মুখী শাখা পদ্মা নদী। জৌলুস হারাতে বসেছে নদীর সৌন্দর্য। যে নদী দিয়ে বেশ কয়েক বছর আগেও পানসি নৌকা, ইঞ্জিন চালিত ট্রলার চলতো, সেই নদীতে এখন নৌকা চলাচল করাই দুষ্কর। অচিরেই এই কচুরিপানা পরিস্কার এবং নদীর প্রবেশ পথে সংকুচিত ব্রিজ প্রসারিত না করলে একসময় পানিও মিলবে না এই নদীতে। হাজার হাজার মাঝি মাল্লা নৌকা নিয়ে ভিড়তো যে ঘাটে সেই ঘাট এখন পানি শূন্য। যতটুকু পানি আছে সে পানিতে ভেসে আছে কচুরিপানা।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, গোয়ালন্দ উপজেলার বিহারীমারা কোল ও মাল্লাপট্টিখ্যাত পদ্মা নদীতে চলতো বড় বড় জাহাজ। নোঙর ফেলতো গোয়ালন্দ মাল্লাপট্টি নামক স্থানে। পানিতে থৈ থৈ করতো নদীর বুক। শত শত ব্যবসায়ী তাদের মালামাল জাহাজে করে নিয়ে আসতো গোয়ালন্দের এই ঘাটে। সে সমস্ত মালামাল গোয়ালন্দ থেকে ট্রেনে করে যেতো দেশের বিভিন্ন স্থানে। এমনকি কলকাতাতেও যেতো অনেক দ্রব্যাদি। এখন সে নদী আর নেই। বর্ষা মৌসুমে একটু-আধটু পানি হয় তবে সে পানি দেড় দুমাসের বেশি থাকে না। বছরের বেশিরভাগ সময়ই কচুরিপানায় ভরে থাকে নদী। গোয়ালন্দ বাজারের পদ্মার মোড়-হতে বিহারী মারা কোল ঘেষে বাহাদুরপুর, মঙ্গলপুর, জামতলা, মাইজা মিয়ার ডাঙ্গী হয়ে ফরিদপুর সদরের কামারডাঙ্গী এলাকা পর্যন্ত কচুরিপানা দখল করে রেখেছে নদীতে। যতœ আর অবহেলায় হারিয়ে যাচ্ছে সোনালী অতীত। নদীর পুরোটা জুড়েই শুধু কচুরিপানা। এক ফোটা পানিও চোখে দেখার মতো অবস্থায় নেই। কচুরিপানায় গিলে ফেলেছে নদীর ৯০ শতাংশ। কচুরিপানার কারণে মৎস্যজীবী, জেলে এমনকি কৃষকদের চাষাবাদে ব্যপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর হলো এই কচুরিপানার পরিমাণ বেড়েই চলছে। দুই যুগ আগেও মমিনখার হাট, কামারডাঙ্গী, মজলিশপুর, মহিদাপুর, চরকর্ণেশনা ও ফরিদপুর হতে নদী পথে ট্রলারযোগে কৃষিপণ্য আসতো এই নদী পথে। গোয়ালন্দ বাজারের সপ্তাহিক দুটি হাটের দিন সারি সারি নৌকা ও ট্রলার বাধা থাকতো ঘাটে। দিনশেষে মালামাল বিক্রি করে পুনরায় ট্রলারগুলো ফিরে যেতো তাদের নিজ গন্তব্যে। ফরিদপুরসহ অন্যান্য সব জায়গার সাথে নদীর চলাচলের প্রবেশপথ থাকলেও অপরিকল্পিত একটি ব্রিজ তৈরি করার কারণে এখন আর ট্রলার ও নৌকা ভরে কৃষিপণ্য আনানেয়া সম্ভব নয়। বর্ষা মৌসুমে পানি বাড়লেও নদীর প্রবেশ মুখ দিয়ে ট্রলার ঢোকা সম্ভব হয় না। ছোট ছোট ট্রলার বা নৌকা চলাচল করবে কচুরিপানার জন্য প্রবেশ করতে পারে না। ফলে গোয়ালন্দ বাজারের ব্যবসায় ক্ষতির ঢল নেমে এসেছে।
জানা যায়, প্রধান নদী হতে গোয়ালন্দ বাজার পর্যন্ত প্রবেশ করার ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের বেদনডাঙ্গী খালপাড় আয়নালের বাড়ির নিকট ও গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের মজলিশপুর গ্রামের শুরুতে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের অধিনে ৩২ লক্ষ ৪১ হাজার ৪৩৬ টাকা ব্যয়ে ৩৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট উচ্চতায় অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণে বর্ষা মৌসুমে ট্রলারগুলো প্রবেশ করতে না পারাই নদীতে বিচরণ করাই মুশকিল হয়ে গেছে।
এলাকার সচেতন নাগরিকদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন, মরা পদ্মা হতে এসমস্থ কচুরিপানা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান না করলে আগের মতো এই নদী দিয়ে বিভিন্ন স্থান হতে পণ্য আসা শুরু হবে না। প্রবেশ মুখের ব্রিজটি প্রসারিত করলে জৌলুস ফিরে পাবে নদীর সৌন্দর্য। পানি উন্নয়ন বোর্ড, নদী গবেষণা কেন্দ্রগুলো যদি এই নদীর শাষন কার্যক্রম চালু করে তাহলে হয়ত নদীর প্রাণচঞ্চলতা ফিরে আসবে।
গোয়ালন্দ বাজারের ব্যবসায়ী ও কৃষি উদ্েযক্তা হুমায়ুন আহমেদ বলেন, আমরা মুরব্বিদের কাছে শুনেছি ব্রিটিশ আমলে এই নদী দিয়ে বড় বড় জাহাজ চলাচল করতো। ২০/২৫ বছর আগেও ট্রলারযোগে দেশের বিভিন্ন স্থান হতে কৃষিপণ্য এই নদীপথ দিয়ে আনতাম। খরচও ছিলো অনেক কম। ট্রলারযোগে খুব সহজেই মালামাল আনতাম। একবারে আমার দোকানের কাছেই ট্রলার চলে আসতো। খুবই কম খরচ পরতো সকল পণ্য আনা নেয়ায়। ৬/৭ বছর আগে নদীর প্রবেশ মুখে অপরিকল্পিত ব্রিজ নির্মাণ করায় এবং নদীতে কচুরিপানা থাকায় নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আর নদী পথে মালামাল আনা হয় না। তিনি আরো বলেন, প্রবেশ মুখের ব্রিজটি প্রসারিত এবং মরা পদ্মার কচুরিপানা পরিস্কার করলে বর্ষা মৌসুমে অন্তত কম খরচে সার, কীটনাশক আনা নেয়া করা যাবে। তিনিসহ সচেতন মহলের অনেকেই মরা পদ্মার জৌলুস ফেরাতে প্রশাসনের অতি দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেন। পাশাপাশি নাগরিক সমাজ, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর উচিৎ মরা পদ্মা হতে কচুরিপানা অপসারণ করা।
প্রকাশক : ফকীর আব্দুল জব্বার, সম্পাদক : ফকীর জাহিদুল ইসলাম, সম্পাদকীয় কার্যালয়ঃ ২২ নং ইয়াছিন স্কুল মার্কেট (২য় তলা), হাসপাতাল সড়ক, রাজবাড়ী সদর, রাজবাড়ী মোবাইল: 01866962662
© All rights reserved © 2022 daily Amader Rajbari